আপনার কি খাচায় পাখি পালার ইচ্ছে খুব? কিন্তু ছোট বাসায় থাকেন বলে পালতে পারছেন না? অথবা অন্যান্য খাচার পাখির শব্দের জন্য বাসার অন্যান্য সদস্যরা অভিযোগ করে বলে পাখি পোষার শখ মেটাতে পারছেন না? তাহলে আপনার জন্য পারফেক্ট পাখি হচ্ছে জেব্রা ফিঞ্চ!

এরা আকারে ছোট, আপনার হাতের তালুতে ধরবে। বেশি শব্দ করে না। এদের যত্ন নেয়া খুবই সহজ। আর আপনার যদি পাখির বেবি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বলব জেব্রা ফিঞ্চ আদর্শ পাখি।
চলুন দেখি জেব্রা ফিঞ্চ পালতে গেলে কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
জেব্রা ফিঞ্চের মিউটেশন বা কালার
পৃথিবীতে মোট ২০ কালারের জেব্রা ফিঞ্চ আছে। আমাদের দেশে প্রায় সব গুলোই পাওয়া যায়। জনপ্রিয় মিউটেশন গুলো হল- ব্লাক ব্রেস্টেড, ব্লাক চিক, সাদা, অরেঞ্জ, ব্লাক ফেস, ইসাবেল, ফ্লোরিডা ফেন্সি ইত্যাদি।
প্রথমে আপনি নরমাল গ্রে কালার দিয়েই শুরু করবেন। পরে না হয় অন্যান্য মিউটেশনের দিকে গেলেন।
জেব্রা ফিঞ্চের মেল ফিমেল শনাক্ত করা
এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকতে ভালোবাসে। একা থাকলে ডিপ্রেশনে ভোগে। কাজেই কেনার সময় মেল ফিমেল দেখে কিনবেন। মেল ফিমেল আলাদা করা খুবই সহজ। মেল পাখির ঠোট ফিমেল পাখির চেয়ে লাল হবে। ফিমেল পাখির ঠোট অনেক টা কমলা কালার হয়।
মেল পাখির গালে কমলা বা কালো রঙের গোল দাগ থাকে যেটা ফিমেল পাখির নেই। ফিমেল পাখির চোখ থেকে লম্বা কালো দাগ আছে যেটা মেল পাখির নেই।

এসব দিয়েও যদি আলাদা করতে না পারেন, তাহলে পাখির খাচার সামনে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যে যে পাখিটি জোরে ডাকবে সেটাই মেল। ফিমেল পাখি অনেকটা প্যাক প্যাক করে শব্দ করে।
জেব্রা ফিঞ্চের খাবার
জেব্রা ফিঞ্চ মূলত সিডমিক্স খায়। এদের ঠোট যেহেতু ছোট তাই বড় সীড যেমন সূর্যমূখীর বীজ বা কুসুম ফুলের বীজ এরা খেতে পারে না। জেব্রা ফিঞ্চের সীড মিক্সে নিচের উপাদান গুলো থাকা ভালো-
চিনা- ২ কেজি
কাউন- ১ কেজি
মিলেট মিক্স- ১ কেজি
পোলাওয়ের ধান- ৫০০ গ্রাম
ক্যানারি সিড -৫০০ গ্রাম
মোট ৫ কেজি
সপ্তাহে এক দিন শাক সবজি, যেকোন একটা ফল কুচি করে কেটে দিবেন। সেদ্ধ ডিম এরা খুব পছন্দ করে। ডিম সেদ্ধ করে কুচি করে দিলে খুব মজা করে খায়। পিপড়ার ডিম দিলেও এরা ঝাপিয়ে পরে। প্রতিদিন ফ্রেশ পানি দিবেন। রাতে খাচা থেকে পানি আর খাবারের বাটি সরিয়ে রাখবেন।
জেব্রা ফিঞ্চ সিডের খোসা খায় না। খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের বীজ খায়। কাজেই খাবারের বাটিতে খোসা দেখে আবার ভাববেন না সিড খায়নি। খোসা ঝেড়ে নিয়ে অবশিষ্ট সিড ধুয়ে রোদে শুকিয়ে আবার খেতে দিতে পারবেন।
প্রতি মাসে প্রথম সপ্তাহে ভিটামিন এ এবং ডি সাথে ক্যালসিয়াম খাওয়াবেন। জেব্রা ফিঞ্চের ফিমেল প্রচুর ডিম দেয়। ফলে এদের শরীরে ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন এ এর অভাব দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণের জন্য খাচায় ক্যাটল ফিশ বোন অথাবা সেদ্ধ ডিমের খোসা দিয়ে রাখুন।
খাচার মাপ
নূন্যতম ১২*১৬ ইঞ্চি খাচা লাগবে। এর চেয়ে বড় দিলে আরও ভালো। খাচায় পাশাপাশি একটু দূরে দুইটা গাছের ডাল দিবেন। ফিঞ্চ পাখি এক ডাল থেকে অন্য ডালে লাফিয়ে যেতে পছন্দ করে। একটা ডাল একটু উপরে অন্যটা একটু নিচে দিবেন।
খাচাতে ওদের খেলার জন্য হালকা ওজনের কিছু দিতে পারেন। যেমন- কলমের হেড, টয়লেট টিস্যুর কাগজের রোল। এরা সারা দিন ওইটা টানাটানি করবে।
খাচার ট্রে সপ্তাহে দুই দিন পরিষ্কার করবেন। এদের বাথরুমের খুব বেশি গন্ধ হয় না। তবে এরা প্রচুর পানি খায় বলে এদের বাথরুম একটু তরল টাইপের হয়।
জেব্রা ফিঞ্চ গোছল করতে পছন্দ করে খুব। এদের গোছল করতে দেখাটাও আনন্দের। ছোট একটা বাটিতে অল্প কিছু পানি দিয়ে খাচায় দিন। এরপর উপভোগ করুন ফিঞ্চের গোছল। গোছল শেষ হলে বাটি বের করে নিন। নয়তো ঐ পানিই খাবে।
জেব্রা ফিঞ্চের ব্রিডিং
এরা প্রচুর ডিম দেয়। কিন্তু যদি বেবি করতে চান তাহলে স্পেশাল কেয়ার নিতে হবে। প্রথম এবং প্রধান শর্ত প্রাইভেসি লাগবে প্রচুর।
এরা বাসা বানায়। এদের সারা দিন যায় বাসা বানাতে। খাচায় ছোট হাড়ি বা ছোট বক্স দিলেই এরা বাসা বানাতে শুরু করে। বাসা বানানোর জন্য এরা খাচায় যাই পাবে সব নিয়ে হাড়িতে জমাবে।
বাসা করার জন্য দূর্বা ঘাস শুকিয়ে দিতে পারেন। পাটের দড়ি খুলে দিতে পারেন। বাসা বানানো কখনো শেষ হয় না। কাজেই যখনই দেখবেন ফিমেল পাখি ডিম দিয়েছে সাথে সাথে খাচায় আর বাসা বানানোর উপকরণ দিবেন না। নয়তো ডিমের উপরেও এরা বাসা বানাতে থাকে।
৪-৭ টা ডিম দিবে। ডিম ফুটে বের হতে ১২-১৩ দিন সময় লাগে। নতুন পাখি বা প্রথম বার বেবি করলে অনেক সময় পাখি বাচ্চাদের খাওয়ায় না। সেক্ষেত্রে প্রথম দুই এক দিন আপনার খাইয়ে দিতে হবে। বাসায় বেসন বা চালের গুড়া থাকলে পাতলা করে গুলে ঝাড়ুর কাঠির মাথায় নিয়ে বেবির মুখে দিলেই এরা খেয়ে নেয়। বেবি গুলো এক মাসের মধ্যেই নিজে নিজে খেতে শিখে যায়। ছোট অবস্থায় বেবির ঠোট কালো হয়। দুই মাসের মধ্যে কালার চেঞ্জ হয়ে লাল হবে।
ব্রিডিং কোর্স করালে বেশ ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
এরা প্রাইভেসি না পেলে ডিমে তা দিবে না। তাই ঘন ঘন খাচার সামনে যাবেন না।
জেব্রা ফিঞ্চের দাম
নরমাল গ্রে কালারের জেব্রা ফিঞ্চ আপনি ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন। ভলো মিউটেশনের গুলোর দাম একটু বেশি। এমনকি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
জেব্রা ফিঞ্চের রোগ বালাই
জেব্রা ফিঞ্চের সব চেয়ে বড় রোগ হল এরা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না। কাজেই বৃষ্টি বা শীতের সময় খুবই সাবধানে রাখতে হয়। একবার ঠান্ডা লেগে গেলে এদের বাচানো কঠিন।
অন্য আরেকটা রোগ হল মাইটস। এদের পায়ে একধরনের পরজীবী আক্রমণ করে। অবশ্য চিকিতসা করলে এটা ঠিক হয়ে যায়।
ফিমেল পাখি যেহেতু প্রচুর ডিম দেয় ফলে এরা ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন এ এর অভাবে দূর্বল হয়ে মারা যায়। এজন্য এদের নিয়মিত ভিটামিন আর ক্যালসিয়াম খাওয়াতে হয়।
পরিশেষে বলব, অন্যান্য পাখির চেয়ে জেব্রা ফিঞ্চের একটা অন্যরকরম ব্যাপার আছে যেটা একবার পুষলে বুঝতে পারবেলন। এদের জন্য খুব বেশি খরচ হয় না। ঝামেলা কম, কিন্তু আনন্দ অন্য রকম। তাই দেরি না করে এক জোড়া ফিঞ্চ পালা শুরু করে দিন।