এডেনিয়াম সারা বিশ্বে যেটা মরু গোলাপ নামেও পরিচিত। যদিও এটা গোলাপ না। আসলে এক ধরনের সাকুলেন্ট। সাদা, লাল গোলাপি ছাড়াও আরো কয়েক ধরনের আকর্ষনীয় কালারের ফুল ফুটে এডেনিয়ামে। সাদা, লাল বা গোলাপীর শেড মিলে খুবই আকর্ষনীয় ফুলের কালার আসে। একবার দেখলে ভালো লাগেবে না এমন কোন মানুষ নেই মনে হয়। গাছটাই দেখতে অন্য রকম সুন্দর লাগে। মনে হয় যেন একটা বনসাই গাছে ফুল ফুটে আছে। অবশ্য আপনি যদি ফুল অপছন্দ করেন তাহলে ভিন্ন কথা।
গাছটা দেখতে অনেকটা বড় ধরনের মুলার মত। কান্ড মুলার মত মোটা। যেহেতু এরা মরুভূমির গাছ, ফলে এর খুবই কষ্ট সহিষ্ণু গাছ। সাধারনত বাইরে হয়, কিন্তু রুমেও হয়। তবে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় রোদে রাখতে হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে বাগানিদের মাঝে এডেনিয়ামের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
যেহেতু এই গাছটা এখনো নবীনই বলা চলে, ফলে অনেকেই এর পরিচর্যা নিয়ে সংশয়ে ভোগেন। চলুন আজ আমরা এডেনিয়াম গাছের পরিচর্যা সাথে টুকিটাকি আরও কিছু জানব।

এডেনিয়াম গাছের জন্য কী রকম মাটি লাগে
এডেনিয়াম যেহেতু মরুভূমির গাছ, কাজেই এর মাটি অনেকটা ঐ রকমই হতে হবে। পানি জমে না, মোটামুটি বাতাস চলাচল করতে পারে আবার পানি ধরে রাখতে পারে এমন মাটি দরকার। অর্থাৎ বড় দানার বালুময় মাটি উপযুক্ত। তবে এডেনিয়ামের জন্য মাটি বা মিডিয়া কিনতে পাওয়া যায়। পানি ধরে রাখার জন্য নারিকেলের ছোবড়া বা কোকো পিটও ব্যবহার করতে পারেন। এটেল বা দো আঁশ মাটি ব্যবহার করা যাবে। পানি জমে থাকলে এডেনিয়ামের কান্ড পচে যেতে পারে।
এডেনিয়াম গাছের জন্য কী সার ব্যবহার করব
এডেনিয়াম গাছের পরিচর্যা তেমন একটা লাগে না। সত্যি বলতে কি এডেনিয়ামের জন্য তেমন কোন সারও লাগে না। তবে মাসে ২-৩ দানা DAP সার পাত্রে কিনারায় দিতে পারেন। রান্না ঘরের সবজির খোসা পানি তে ভিজিয়ে সেটা মাসে একবার দিতে পারেন। মাসে একবার ছত্রাকনাশক দিন। পুরোনো ভার্মি কম্পোস্ট অল্প পরিমানে মাসে একবার ব্যবহার করুন।
এডেনিয়াম গাছের পাত্র বা টব কেমন হবে
এডেনিয়ামের জন্য বড় কোন টব লাগে না। পাত্র যত ছোট হয় এরা তত ভালো থাকে। তাই বলে একেবার ছোট পাত্র দেয়া যাবে না তাহলে গাছ উলটে যাবে। যেহেতু মাটিতে পানি আটকে থাকা যাবে না এজন্য এমন ধরনের পাত্র বেছে নিন যাতে পানি সহজে ড্রেন হয়ে যায়। এজন্য অনেকে প্লাস্টিকের পটের চেয়ে মাটির পাত্র পছন্দ করেন, কেননা মাটির পাত্র পানি শোষন করতে পারে।
এডেনিয়াম গাছের রোগ বালাই
এডেনিয়ামের প্রধান সমস্যা গোড়া পচে যাওয়া। আমরা গাছে পানি দিয়ে অভ্যস্ত। প্রায় প্রতিদিন পানি না দিলে মনে হয় যেন গাছ না খেয়ে আছে। কিন্তু এডেনিয়াম সে রকম না। মরুভূমিতে সারা বছরে একবার আধবার বৃষ্টি হয়। সেই পানিই এর এদের কান্ডে জমিয়ে রাখে। এজন্য এদের প্রতিদিন পানির প্রয়োজন হয়না। পাত্রের ্মাটি যখন একেবারে শুকিয়ে যাবে তখনই কেবল পানি দিতে হবে। প্রতিদিন তো অবশ্যই না।
মিলিবাগ, স্পাইডার মাইটস আর ফাঙ্গাস অন্যতম সমস্যা। নিয়মিত ফানজিসাইড ব্যবহার করলে এসব পোকামাকড় থেকে মুক্ত থাকা যায়।
এডেনিয়াম কি বনসাই
না। এডেনিয়াম বনাসাই না। এরা দেখতে অনেকটা বনসাইয়ের মত। কিন্তু আসলে এরা এরকমই। এজন্য এডেনিয়াম আমার বেশি ভালো লাগে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত। এদের নামের মত এরা গোলাপ ও না।
এডেনিয়াম কি বিষাক্ত
হ্যা এডেনিয়াম বিষাক্ত। আপানার বাসায় যদি ছোট বাচ্চা বা পোষা বিড়াল অথবা কুকুর থাকে তাহলে এডেনিয়াম গাছ কে এদের থেকে দূরে রাখতে হবে। গাছের পাতা বা ফুল স্পর্শ করলে সমস্যা নেই। কিন্তু এর কষ চামড়ায় লাগলে চুলকায়। পেটে গেলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে। এডেনিয়ামে মারাত্মক কার্ডিয়াক এরেস্ট বা হার্ট এটাক হতে পারে। কাজেই সাবধান হওয়া উচিৎ।
এডেনিয়াম গাছের দাম
এডেনিয়াম গাছের দাম ফুলের কালারের উপর নির্ভর করে। তবে সর্ব নিম্ন ৩৫০/- থেকে ১৫০০/- পর্যন্ত হয়। যদি মাল্টি কালার গ্রাফটিং গাছ হয় তাহলে দাম আরও বেশি হতে পারে। মাল্টি কালার গ্রাফট বলতে একই গাছে কয়েক কালারের ফুলের গ্রাফট করা হয় ফলে একই গাছে কয়েক কালারের ফুল ফুটে। এখন অনেক অনলাইন শপেই এডেনিয়াম কিনতে পাওয়া যায়। এমন কি অনেক ফেসবুক গ্রুপ আছে যেখান থেকে আপনি এডেনিয়াম সংগ্রহ করতে পারবেন।
অনলাইন বা ফেসবুক থেকে গাছ সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে চারা কি কাটিং থেকে করা নাকি বীজ থেকে জার্মিনেট করা। কাটিং থেকে করলে মাদার গাছের ফুলের কালার আর কাটিংয়ের কালার একই হবে। কিন্তু বীজ থেকে প্রোপাগেট করা গাছের ফুলের কালার মাদার গাছের মত নাও হতে পারে।
এডেনিয়াম গাছ বীজ, কান্ডের কাটিং বা পাতা থেকেও করা যায়। সব সাকুলেন্টই পাতা থেকে গাছ হয়। এটাও হয়।
গাছ কেনার আগে মিডিয়া, পট ইত্যাদি আগে কিনে রাখবেন। তা না হলে দেখা যায় গাছ কিনে এনেছেন কিন্তু মিডিয়ার অভাবে পটিং করতে পারছেন না।
তাহলে আর দেরি না করে আপনার বাগানে লাগিয়ে ফেলুন মরু গোলাপ বা এডেনিয়াম আর বছর জুড়ে উপভোগ করুন ফুলের সৌন্দর্য।