ক্যাকটাসের প্রায় এক হাজারেরও বেশি জাত আছে। আমরা সাধারণত জানি যে ক্যাকটাস মরুভূমির গাছ। কিন্তু মজার বিষয় হলো ক্যাকটাস যেমন মরুভূমিতে পাওয়া যায় তেমনি বনেও পাওয়া যায়। বনের ক্যাকটাস আর মরুভূমির ক্যাকটাসের মধ্যে পার্থক্য হল মরুভূমির ক্যাকটাসে কাটা থাকে যেটা বনের ক্যাকটাসে থাকে না। সবচেয়ে জনপ্রিয় বনের ক্যাকটাস হচ্ছে ক্রিসমাস ক্যাকটাস যেটা ব্রাজিলের স্থানীয় একটা প্রজাতি। ক্রিসমাস ক্যাকটাস থেকে সাদা, লাল, গোলাপি, বেগুনি এমনকি হলুদ ফুলও পাওয়া যায়। ক্যাকটাস খুব ধীরে ধীরে বড় হয় আর যতগুলো হাউস প্ল্যান্ট আছে এরমধ্যে ক্যাকটাস হচ্ছে সবচেয়ে শক্ত ধরনের গাছ।

ক্যাকটাসের পরিচর্যা
আগেই বলেছি ক্যাকটাস খুবই শক্ত ধরনের গাছ। রোদ আর মাঝেমধ্যে পানি দিলেই হয়। এমনকি শীতকালে মাসে একবার অল্প পানিই যথেষ্ট। শীতকালে ক্যাকটাস অনেকটা ঘুমিয়ে পড়ে। কাজেই খুব একটা পানি লাগে না। এমনকি যদি পানি না দেয়ার জন্য গাছ শুকিয়েও যায় তাতেও সমস্যা নেই। আবার পানি দিলেও আগের মত হয়ে যায়। শীতকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় মাসে দুইবার পানিই যথেষ্ট। পানি দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই পটে জমে না থাকে।
ক্যাকটাস যদিও ইন্ডোরে ভালো থাকে কিন্তু তারপরও এর সুস্থতার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে 2 থেকে 3 ঘন্টা রোদে রাখা প্রয়োজন। ক্যাকটাস কোনভাবেই বৃষ্টির পানিতে ভেজানো যাবেনা। তাহলে এর কান্ড ও শেকড় পচে যেতে পারে।
ক্যাকটাস এর জন্য কি ধরনের মাটি লাগবে
ক্যাকটাস যেহেতু মরুভূমির গাছ কাজেই মাটি এমন হতে হবে যাতে কোনোভাবেই পানি জমে থাকে না। পঁচা পাতা, বালুমাটি, কেচো সার, ইটের টুকরা, কাঠের চিপস, হাড়ের গুড়া, কাঠ কয়লা (২০%+৩০%+১৫%+১৫%+১০%+ ২%+৮%) (পঁচা পাতার পরিবর্তে কোক ডাষ্ট বা নারিকেলের ছোঁবরা অথবা ধানের চিটা ব্যবহার করা যেতে পারে তবে পঁচিয়ে নিতে হবে)।
ক্যাকটাসের মাটির তৈরীর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পানি জমে না যায়, মাটির মধ্যে দিয়ে বাতাস ভালোভাবে চলাচল করতে পারে। যেহেতু বালু পানি আটকে রাখতে পারে না এর জন্য অল্প পরিমাণে ককপিট ব্যবহার করতে হবে।
ক্যাকটাস এর জন্য কোন সার ব্যবহার করতে হবে
ক্যাকটাস এর জন্য আসলে তেমন কোন সারের প্রয়োজন নেই তারপরও আপনি চাইলে ইউরিয়া ৮ গ্রাম,পটাশ ১৬ গ্রাম, টি,এস পি ১৬ গ্রাম (প্রতি লিটারে পানিতে) ৩ মাস অন্তর হালকা ভাবে গাছের গায়ে স্প্রে করতে হবে। তবে সেটি অবশ্যই সকাল সকাল করতে হবে,যেন দিনে দিনে শুকিয়ে পানি শুকিয়ে যায়।
ক্যাকটাসের নতুন চারা কীভাবে করবেন
ক্যাকটাস গাছ সাধারণত ডাল থেকে বা পাতা থেকেই হয়। মা-গাছের মূলে শাখা জন্মে৷ ব্লেড দিয়ে সমান ভাবে সাবধানে কেটে, বা হাতে হালকা করে চাপ দিয়ে বা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভেঙে তা আবার অন্য জায়গায় লাগানো যায়। কাটার জন্য ধারালো ব্লেড ব্যাবহার করতে হবে,আর কাটা স্থানে অবশ্যই ডায়থেন -এম ৪৫ দিতে হবে, আর চারার জন্য কাটা অংশটির মাঝে ডায়থেন – এম ৪৫ লাগিয়ে ২ দিন পর লাগাতে হবে।
কিন্তু আপনি চাইলে ক্যাকটাস বীজ থেকেও গাছ করতে পারবেন। ক্যাকটাস সহজে অঙ্কুরোদগম হতে চায়না। সাধারণভাবে ক্যাকটাসের অঙ্কুরোদগম হতে এক মাস সময় লাগে। কিছু কিছু জাতের দুই তিন মাস লাগতে পারে। ক্যাকটাস অঙ্কুরোদগমের একটি টেকনিক হলো বীজগুলো কোকোপিটের সাথে ভিজিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন এক থেকে দেড় মাস। প্রতিদিন খেয়াল করবেন বীজগুলো ফেটে গিয়েছে কিনা। বীজ ফেটে যাওয়া মানে গাছ হওয়া শুরু হয়েছে। তারপর সেই বীজ নিয়ে পটে দিয়ে সূর্যের আলো পড়ে এমন জায়গায় রেখে দিন। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে পানি দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিবেন। বীজ গুলোর উপরে প্লাস্টিকের আবরণ দিতে পারেন। একবার গাছ হয়ে গেলে আবরণ সরিয়ে ফেলবেন।
ক্যাকটাস এর পোকা ও রোগবালাই
সব ধরনের ক্যাকটাস মিলিবাগ, স্কেল ফাঙ্গাস এবং স্পাইডার মাইট দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। পাতা কুঁচকে যাওয়া ছাতা পড়া অথবা গাছে গাছে পোকা দেখতে পাওয়া বা মাটিতে পোকা দেখতে পাওয়া ইত্যাদি। পোকা দেখা গেলে তুলা দিয়ে অথবা কটন বাড দিয়ে পোকা গুলো সরিয়ে ফেলবেন। বেশিরভাগ পোকাই বালাইনাশকের প্রতি রেজিস্টেন্ট হয়ে গেছে ফলে আগের মত পেস্টিসাইড আর কাজ করে না।
গাছের গোড়ায় ও গাছে ফাঙ্গাসের জন্য ডায়থেন-এম ৪৫ দুই/তিন মাস অন্তর(লিটারে সাড়ে চার গ্রাম) দিয়ে স্প্রে করতে হবে। এটি দিলে গাছ পঁচবে না। যেদিন ব্যবহার করবেন সে দিন অবশ্যই রোদে রাখবেন।ডায়থেন-এম -৪৫ এর সাথে ম্যাগনল লিটারে হাফ মিলি ব্যবহার করতে পারেন,এতে করে শিকড়ের ও ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
ক্যাকটাসের বেশি পানি দিলে ছত্রাকের আক্রমণে গোড়া ও শেকড় পচে যেতে। ছত্রাকের আক্রমণ হলে কালো কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। যদি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পচন ধরে সে ক্ষেত্রে ক্যাকটাসের কান্ড থেকে কাল কষ বের হয়। ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া যে ধরনের পচনই হোক না কেন এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে মুছে দিলে উপকার পাওয়া যায়। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পানির সাথে মিশিয়ে পাতলা করে নেবেন।
ক্যাকটাস এর সাধারণ কিছু সমস্যা
সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হচ্ছে শীতকালে বেশি বেশি পানি দেওয়া। এর ফলে গাছের গোড়া পচে যায়। যদি গাছের গোড়ায় পচন ধরে সে ক্ষেত্রে যে অংশটা পচে গিয়েছে সে অংশটা ফেলে দিতে হবে। যদি বেশি পরিমাণে পচে যায় সেক্ষেত্রে পুরো গাছই ফেলে দেওয়াটাই ভালো। আমরা অনেক সময় কেমিক্যাল ব্যবহার করি কেমিক্যাল প্রচুর পরিমাণে হেভি মেটাল থাকে বা ভারী ধাতু থাকে। হেভি মেটাল ক্যাকটাসের কাজের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ক্যাকটাসের যেহেতু ছাল বা বাকল নেই এর ফলে সামান্য আঘাতে ক্যাকটাসের গায়ে ছিদ্র হয়ে যায়। সেখানে পচন ধরে। কাজেই ক্যাকটাসের যত্ন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন খোঁচা বা আঘাত না লাগে। যদি আঘাত লেগে যায় সেক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে মুছে দিতে হবে
ক্যাকটাস রিপটিং করা
সাধারণত ক্যাকটাসের রিপোর্ট করতে হয়না। কিন্তু তারপরও যদি প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রে আগের পট এর চেয়ে সামান্য বড় পট নিতে হবে। প্রথমেই আগের পটে পানি দিন তারপর পানি ঝরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। পানি ঝরে গেলে মোটা কাপড় অথবা মোটা কাগজ দিয়ে ক্যাকটাস গাছ কে ধরে আলতো করে তুলে আনতে হবে। মাটি থেকে তোলার সময় একটা কাঠি দিয়ে শিকড়ের আশেপাশে মাটি আলগা করে দিতে হবে। এতে সহজেই শিকড় না ছিড়ে গাছ উঠে আসবে। শেকড়ের সাথে যে মাটি লেগে থাকবে সেগুলো সাবধানে কাঠি দিয়ে সরিয়ে ফেলুন। এমনভাবে সরাবেন যেন গাছের শেকর না ছিড়ে যায়। তারপর নতুন পাত্রে অর্ধেকের বেশি মাটি দিয়ে গাছটি সেখান দিয়ে এর উপর মাটি দিয়ে চাপা দিন। প্রথম কয়েকদিন নতুন পটে পানি দেয়া যাবে না। যদি পানি দেন তাহলে যে শেকড় গুলো ছিঁড়ে গিয়েছে সেগুলোতে পচন ধরবে।

ক্যাকটাস গাছের দাম
সিংগেল কালার ফুল ক্রিসমাস ক্যাকটাসে ২৫০/- থেকে ৩০০/-। একই পটে দুই কালারের হলে ৫০০/- তিন কালারের ফুল হলে ৬০০/ থেকে ৭০০/- টাকায় পাওয়া যায়।’
সিংগেল বল ক্যাকটাস ৫০/- থেকে ৮০/- টাকা। একাধিক বল থাকলে ১৫০/- থেকে ২০০/- টাকায় পাওয়া যায়।
জিমানো ক্যাকটাস (গোলাপী ফুলের) ২০০/- থেকে ২৫০/- টাকা
ফেরো ক্যাকটাস ১০০/- থেকে ২০০/- টাকা। সাইজ বড় হলে দাম বেশি হয়।
মোট কথা ক্যাকটাস রেয়ার হলে দাম ৩০০/৪০০ টাকা হবে। এমনি কমন গুলো ৫০/- থেকে ২০০/- টাকার মধ্যে পাবেন। অনলাইনে কিনতে চাইলে অবশ্যই ট্রাস্টেড কিনা দেখ নিবেন। তবে এখন ফেসবুকে অনেক প্ল্যান্ট গ্রুপ আছে সেখান থেকে নিলে দামেও কম পাবেন সেই সাথে টাকা খোয়া যাওয়ার সম্ভাবনাও কম।