বর্তমানে ড্রাগনফল বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যশোরে এখন পেয়ার আর সবজির পাশাপাশি ড্রাগনফল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা যারা শহরে থাকি তাদের তো আর চাষ করার মত জমি নেই। ছাদে বা নিজের বারান্দায় আমরা আমাদের শখ মিটাই। আজ আমরা কীভাবে ছাদে টবে ড্রাগনফল চাষ করা যায় তাই শিখব।
ড্রাগনফলের পুষ্টিগুণ
ছাদ বাগানে ড্রাগনফল লাগানোর আগে চলুন দেখে নেই ড্রাগনফল আসলে কতটা পুষ্টিকর। প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগনফলে-
১. শক্তি পাওয়া যায় ৬০ ক্যালরি। যা একটি সেদ্ধ ডিমের সমান।
২. শর্করা আছে ১২ গ্রাম
৩. আমিষ আছে ১.২ গ্রাম
৪. কোন চর্বি নেই
৫. আমাদের দৈনিক ভিটামিন সি এর চাহিদার ৩% আছে
৬. আয়রন আছে ৪% (দৈনিক চাহিদার)
৭. ম্যাগনেসিয়াম আছে ১০% (দৈনিক চাহিদার)
৮. আঁশ আছে ৩ গ্রাম
শূণ্য চর্বি, উচ্চ আঁশ ও ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি সেই সাথ অন্যান্য পুষ্টি উপদানও কম বেশি থাকায় ড্রাগনফল কে উচ্চ ঘনত্বর পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এছাড়াও ড্রাগনফলে আছে কয়েক ধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট। এন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে তৈরি হওয়া ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই ফ্রি র্যাডিক্যলা গুলো আমাদের বয়স বাড়া এবং বিভিন্ন ক্রনিক রোগের কারন।
এন্টি অক্সিডেন্ট গুলোর মধ্য প্রধান তিনটা হল-
বেটালেইন- লাল ড্রাগনফলের লাল রঙের কারন হল এই বেটালেইন। এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল হতে হার্টকে রক্ষা করে।
হাইড্রোক্সিসিনামেট- এই এন্টি অক্সিডেন্ট গুলোর এন্টি ক্যান্সার ধর্ম রয়েছে।
ফ্ল্যাভোনয়েড- ফ্ল্যাভনয়েড আসলে অনেক গুলো এন্টি অক্সিডেনটের একটা গ্রুপ। এরা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ইদুরের উপর গবেষনা করে দেখা গেছে যে, ড্রাগনফল ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হতে বাধা দেয় এবং ফ্যাটি লিভার হতে বাধা দেয়।
ড্রাগনফলের ফাইবার আসলে একধরনের প্রোবায়োটিক ফাইবার। যা আমাদের পেটের উপকারি ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
ড্রাগন ফলের ক্ষতিকারক দিক
তেমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই। তবে অনেকেরই এলার্জি আছে। যাদের এলার্জি আছে তাদের ড্রাগন ফল এড়িয়ে চলাই উত্তম।
ছাদ বাগানে ড্রাগনফল চাষ করব কীভাবে
ছাদ বাগানে ড্রাগনফল গাছ লাগানোর জন্য বড় ড্রাম কেটে নিতে হবে। মাঝে একটা পিলার দিতে হবে গাছের সাপোর্টের জন্য। ড্রাগন ফল সব ধরনের মাটিতে হয় তবে সেটা জমির মাটি হতে হবে। পচা কাদা, জমা মাটি, বাড়ি করার গর্তের মাটি বা বেশি বালুময় মাটিতে হবে না। এটেল মাটি টবে লাগানোর জন্য ভাল। কারন মাটি শক্ত হবার জন্য বেশি স্যাতসেতে থাকে না। আর শক্তভাবে আটকে থাকে ও লিকেজ কম হয়। সমান পরিমান মাটি ও ভার্মিকম্পোষ্ট ভালো করে মিশিয়ে নিন। ভার্মি কম্পোস্ট না পেলে 40%মাটি, 20%বালি ও 40% এক বছরের পুরোনো গোবর মিশিয়েও মাটি তৈরি করে নিতে পারেন।
ড্রাম সহ গাছ প্রখর রোদে রাখতে হবে। তবে গাছের গোড়ার মাটি যেন গরম না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। নয়তো গোড়া পচন ধরবে। ফুল ফোটার সময় একটু হালকা আচ্ছাদন হলে ভাল, নিয়মিত পানি আর মাঝে মাঝে খৈল পচা পানি দিবেন। পরে ডাল ছাড়লে মাসে একবার অল্প জিংক সার, DAP সার, আর খোলপচা পানি দিতে হবে। আর মাসে একবার ফাংগিসাইড দিতে হবে। এতে ফাংগাস বা ছত্রাকের আক্রমণ হবে না। সার কখনো সরাসরি গাছের গোড়ায় দিবেন না। ড্রামের কিনারা বা গোড়া থেকে একটু দূরে দিবেন।

ড্রাগন ফল পেকেছে কিনা বুঝব কীভাবে
ফলের বাইরে যে খোসার মত হয় সেটা শুকিয়ে আসলে বুঝতে পারবেন ফল পেকেছে। তখন ফল একেবারে লাল টকটকে হয়ে যায়।
ড্রাগনফলের দাম কত
আমি প্রথম কিনি টাঙাইলে। টাঙ্গাইলে সব কিছুর দাম বেশি। আমি কিনেছিলাম ৪০০/- কেজি। কিন্তু ঢাকা বা অন্যান্য জেলায় ২৫০/- থেকে ৩০০/- কেজিতে পাওয়া যায়।
ড্রাগনফল কীভাবে খাওয়া যায়
সাধারন ভাবে কেটে ভেতরের নরম শাস টুকু খেতে হয়। খোসা ফেলে দিন।
ড্রাগনফল খেতে গেলে এর বীজ গুলো মুখে লাগে। এটা অনেকের ভালো লাগে আবার অনেকের বিরক্ত লাগে। এই বীজ গুলোর মধ্যেই কিন্ত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিদ রয়েছে।
আমার কপাল খারাপ ছিল। তাই প্রথমবার যখন ড্রাগনফল কিনি সেটা তেমন মিস্টি ছিল না। ফলে পরবর্তীতে আর কিনিনাই। তাছাড়া দামও অনেক বেশি মনে হয়েছে। তবে বেশিরভাগ অভিজ্ঞ বন্ধুরা বলেছে আমি ঠকেছি। ড্রাগন ফল নাকি মিস্টি হয় খেতে। যাই হোক, আপনার ছাদ বাগানে ড্রাগন লাগান। ফল হলে দাওয়াত দিয়েন খেয়ে আসব।