ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন প্যারট
ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন টিয়া (Amazona oratrix) হলো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যামাজন প্রজাতির টিয়াগুলির মধ্যে একটি। এর উজ্জ্বল রঙ, চমৎকার ব্যক্তিত্ব এবং অবিশ্বাস্য অনুকরণ ক্ষমতা এই পাখিটিকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পোষা প্রাণী হিসেবে অত্যন্ত প্রিয় করেছে। এটি এমনকি অপেরার গানও নকল করতে পারে, যা পাখি প্রেমীদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
প্রজাতির বিবরণ:
- সাধারণ নাম: ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন টিয়া, ইয়েলো-হেডেড টিয়া, ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন
- বৈজ্ঞানিক নাম: Amazona oratrix
- আকার: পূর্ণবয়স্ক টিয়ার দৈর্ঘ্য ১৪ থেকে ১৬ ইঞ্চি হয়, যা এটিকে বড় আকৃতির টিয়াগুলির মধ্যে একটি করে তোলে।
- আয়ুষ্কাল: সাধারণত ৬০ বছর বা তারও বেশি, উপযুক্ত যত্নে প্রায় ৮০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
উৎপত্তি এবং ইতিহাস
ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন টিয়ার আদি বাসস্থান হলো মেক্সিকো এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ঘন বনাঞ্চল। এই প্রজাতির প্রধান বিপদ হলো বন উজাড় এবং বাণিজ্যিকভাবে শিকার। এ কারণে প্রজাতিটি বিপন্ন হয়ে পড়েছে, এবং আন্তর্জাতিকভাবে এটির বাণিজ্য সীমিত করা হয়েছে। বন্দী অবস্থায় জন্মানো পাখিগুলি অবশ্য বৈধভাবে পোষা প্রাণী হিসেবে লালন-পালন করা যায়, তবে এ জন্য বৈধ ডকুমেন্টেশন থাকা বাধ্যতামূলক।
স্বভাব
এই টিয়া খুবই বুদ্ধিমান এবং সামাজিক, যা তাদের মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক হয়। ছোটবেলা থেকেই মানুষের হাতের সংস্পর্শে থাকলে তারা খুবই স্নেহশীল হয়ে ওঠে এবং মনোযোগ পেতে ভালোবাসে। তবে তারা মাঝেমধ্যে হরমোনজনিত কারণে আক্রমণাত্মক আচরণ করতে পারে, বিশেষ করে যৌন পরিপক্কতার সময়ে, যা সাধারণত কয়েক মাস থেকে দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
কথাবার্তা এবং শব্দ
ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন টিয়া তাদের অসাধারণ কথা বলার ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত। এটি আফ্রিকান গ্রে টিয়ার পরেই সবচেয়ে ভালো বক্তা হিসেবে পরিচিত। তারা বিভিন্ন শব্দ, কথা এবং এমনকি গানের সুর নকল করতে সক্ষম। তবে তাদের চিৎকার করার প্রবণতাও রয়েছে, বিশেষ করে ভোর এবং সন্ধ্যায়। যথেষ্ট মানসিক উদ্দীপনা না পেলে তারা উচ্চস্বরে দীর্ঘ সময় ধরে চিৎকার করতে পারে।
রঙ এবং চিহ্ন
এই পাখিটির পুরো শরীর সবুজ, তবে মাথার অংশটি উজ্জ্বল হলুদ রঙের। কিশোর বয়সে মাথায় কিছু ধূসর রঙ থাকতে পারে, যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে হলুদ হয়ে যায়। চোখের চারপাশে সাদা বৃত্ত এবং ঠোঁটের রঙ হালকা থাকে। পুরুষ এবং মহিলা পাখি দেখতে প্রায় একরকম হয়, তাই তাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে জেনেটিক পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
যত্ন
ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন টিয়া অত্যন্ত সক্রিয় এবং তাদের পর্যাপ্ত ব্যায়াম এবং মানসিক উদ্দীপনার প্রয়োজন হয়। তাদের জন্য একটি বড়, মজবুত খাঁচার প্রয়োজন, যেখানে তারা সহজে উড়তে এবং চড়তে পারে। খাঁচায় বিভিন্ন আকারের কাঠি, চিবানোর খেলনা এবং শারীরিক সক্রিয়তা বৃদ্ধির উপকরণ থাকা উচিত। পর্যাপ্ত খেলনা না থাকলে তারা বাড়ির আসবাবপত্র নষ্ট করতে পারে।
খাদ্য ও পুষ্টি
বন্য অবস্থায় ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন টিয়া বিভিন্ন বীজ, ফল, বাদাম এবং শাকসবজি খেয়ে থাকে। বন্দী অবস্থায় তাদের পুষ্টিকর প্যালেট খাদ্য, তাজা ফল এবং শাকসবজি খাওয়ানো উচিত। তারা খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ-এর অভাব অনুভব করতে পারে, তাই খাবার পরিকল্পনার সময় এটি মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যায়াম
এই পাখিগুলিকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা খাঁচার বাইরে রাখার সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা পর্যাপ্ত শারীরিক এবং মানসিক ব্যায়াম করতে পারে। তাদের খাঁচায় পর্যাপ্ত বড় কাঠি এবং খেলনা রাখা দরকার, যাতে তারা চিবিয়ে তাদের ঠোঁট এবং দাঁতের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে।
সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা
ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন টিয়ার মধ্যে বেশ কিছু সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায়, যেগুলি সঠিক যত্নের অভাবে হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- পলিওমাভাইরাস: একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা পাখির ক্ষুধামন্দা, ওজন হ্রাস এবং অবসাদ ঘটাতে পারে।
- ক্ল্যামিডিওসিস: একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যা পাখির পালক ফুলে যাওয়া এবং নাক দিয়ে তরল নির্গমনের কারণ হতে পারে।
- ভিটামিন এ-এর অভাব: যা পাখির ত্বক এবং পালকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- স্থূলতা: অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাবে স্থূলতা একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
উপসংহার
ডাবল ইয়েলো-হেডেড অ্যামাজন টিয়া একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পোষা পাখি, যা বুদ্ধিমান, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং মনোযোগপ্রিয়। তবে এই পাখির যত্ন নেওয়া একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রতিশ্রুতি, যা অনেক মনোযোগ এবং সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন। এদের উচ্চ স্তরের বুদ্ধি এবং সামাজিকতার জন্য তারা পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। তবে তাদের প্রয়োজনীয় যত্ন ও ব্যায়াম না দিলে এরা চিৎকার বা ধ্বংসাত্মক আচরণ করতে পারে। যারা তাদের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও মনোযোগ দিতে পারবেন, তাদের জন্য এই পাখি হতে পারে এক অসাধারণ সঙ্গী।
আরও পড়ুন-
হায়াসিন্থ ম্যাকাও: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং রঙিন প্যারট