কারেন্ট বিল নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে বিলের যে বিষয়টা নিয়ে সবাই প্রশ্ন করেছেন সেটা হল- ডিমান্ড চার্জ। এইটা আবার কোন চার্জ? এমনিতেই ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে টাকা কেটেকুটে খেয়ে ফেলে তার উপর এই ডিমান্ড চার্জ কাটে। এই আর্টিকেলে ডিমান্ড চার্জ সাথে ডিজিটাল মিটারের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

ধরেন আপনার বাড়িতে গরমের দুই মাস বাদে বাকি দশ মাস গড়ে প্রতিমাসে ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। আপনার একটা ১০ কিলোওয়াট জেনারেটর আছে।
যেহেতু গরমের সময় ফ্যান চলে সেজন্য গরমের দুই মাসে আপনার বিদ্যুৎ লাগে ১৫ কিলোওয়াট করে। কিন্তু আপনার জেনারেটর ১০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। এই অবস্থায় কি করবেন? আরও ৫ কিলোওয়াটের একটা জেনারেটর নিবেন। এইটা দশমাস বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র গরমের সময় চালাবেন। যে দশ মাস বন্ধ থাকবে সে সময়টা মেইনটেন্যান্স তো করতে হবে! মেইনটেন্যান্স না করলে নষ্ট হয়ে যাবে।
সরকারকেও ঠিক এই কাজটিই করতে হয়। গরমের সময় চাহিদা দ্বিগুণ তিন গুন হয়ে যায়। ঈদের সামনে শপিং মল, মার্কেটে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। এর জন্য অতিরিক্ত জেনারেটর স্ট্যান্ডবাই রাখতে হয়। এই যে অতিরিক্ত জেনারেটর, যেটা সব সময় কাজে লাগবে না কিন্তু ইমার্জেন্সি সময়ে লাগবে এর জন্য যে ব্যয় হয়, এই খরচটাই হল ডিমান্ড চার্জ। গ্রাহকদের ডিমান্ড মেটানোর জন্য যে ব্যয় হয় সেটাই ডিমান্ড চার্জ।
আপনার নির্দিষ্ট চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ লাগলে সেটা যোগান দেয়ার জন্য সরকারের যে ব্যয় হয় সেটাই ডিমান্ড চার্জ।
যেমন, ঘূর্নিঝড়ের আগে দুই সপ্তাহ প্রচন্ড গরম থাকে। এসময় চাহিদা অনেক বেশি হয়। কিন্তু সারা বছর তো এমন চাহিদা থাকে না। কিন্তু ঐ দুই সপ্তাহের জন্য জেনারেটর তো সরকারের কিনতেই হয়েছে। যখন কাজে লাগে না তখন বন্ধ থাকলেও মেইন্ট্যান্যান্স তো করতে হয়েছে।
ডিমান্ড চার্জ আবাসিক আর বানিজ্যিক সংযোগের জন্য ভিন্ন। বানিজ্যিক সংযোগে বেশি চার্জ। কারন তাদের চাহিদার উঠা নামা সারা বছরই থাকে।
বাইরের দেশে ডিমান্ড চার্জ বের করার জন্য নির্দিষ্ট সময় সীমা আছে। যেমন, প্রতি ১৫ মিনিটে আপনার বিদ্যুতের চাহিদার গড় থেকে কতটা বেশি লাগল সেটার উপর নির্ভর করে ডিমান্ড চার্জ নির্ধারণ করা হবে। ধরুন, গড়ে প্রতি ১৫ মিনিটে আপনি ২ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যয় করেছেন। হঠাৎ করে মাঝে ১০ মিনিট ৫ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করেছেন। এখন এই যে অতিরিক্ত ৩ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করলেন সেটার জন্য আলাদা চার্জ (ডিমান্ড চার্জ) দিবেন।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ যদি ৬ টাকা হয় তাহলে ৬*৫ = ৩০ টাকা। আবার প্রতি ইউনিট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ এর জন্য ডিমান্ড চার্জ যদি ৫ টাকা হয় তাহলে ৫*৩= ১৫ টাকা ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে। অর্থাৎ মোট বিল হবে (৬*৫) + (৫*৩)= ৪৫টাকা।
কিন্তু আমাদের দেশে ডিমান্ড চার্জ ফিক্সড ১২০ টাকা।
কোন কোন মাসে ডিমান্ড চার্জ ডাবল কাটে কেন?

পূর্বের মাসে যদি ডিমান্ড চার্জ না দিয়ে থাকেন তাহলে ডাবল কাটবে। আপনি যদি প্রিপেইড মিটারে একবারে অনেক টাকা রিচার্জ করেন। সেই টাকা শেষ হতে যদি দুই মাস সময় লাগে তাহলে দুই মাস পরে যখন রিচার্জ করবেন তখন বাকি দুই মাসের টাকাও কেটে নেবে। এই দু মাসের মিটারের ভাড়া ও কাটবে।
ডিমান্ড চার্জের টাকা কি পিডিবি বা পল্লী বিদ্যুৎ এর লোকেরা মেরে দেয়?
এই ডিমান্ড চার্জ বা বিদ্যুৎ বিলের টাকা মেরে খাওয়ার সুযোগ পিডিবি বা পল্লী বিদ্যুৎ এর কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নেই। টাকা ব্যাংক থেকে তোলার সুযোগ কারোরই নাই। আপনি যা বিল দেন পুরো টাকাই সরকারের কাছে জমা হয়।
আমার মিটারের ভাড়া সরকারকে দেব কেন?
মিটার আপনার না। এটা সরকার ফ্রিতে দেয়। আপনি যদি মিটার কেনার টাকা দিয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
ডিজিটাল মিটারে টাকা কি বেশি কাটে?
না। আপনি যতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন ঠিক ততটুকুর টাকাই কাটবে। যদি আপনার মনে হয় টাকা বেশি কাটছে তাহলে বাসার ভোল্টেজ পরীক্ষা করে দেখুন। অনেক সময় লাইনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ভোল্টেজ থাকে। সেক্ষেত্রে টাকা বেশি কাটবে। বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে লাইনের ভোল্টেজ স্বাভাবিকে আনতে হবে।
ডিজিটাল মিটারের ব্যাটারির দাম কি অনেক বেশি?
না। বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা দাম বেশি বললে বুঝবেন টাকা খাওয়ার ধান্দা।
ডিজিটাল মিটারের সুবিধা
১. যেহেতু আপনি টাকা রিচার্জ করবেন কাজেই মাথায় ধারণা থাকবে এই টাকায় কত দিন যাবে বা কত দিন চলতে হবে। ফলে বিদ্যুতের অহেতুক অপচয় হবে না।
২. আগে বিদ্যুতের বিল নিয়ে টেনশন করতে হত। মিটার রিডার কোন ঝামেলা করলে ভুতুড়ে বিল আসত। ডিজিটাল মিটারের এই ঝামেলা নেই।
৩. কত টাকা বাকি আছে সেটা সহজে দেখা যায়। (মিটারে ৮০১ চেপে লাল বোতামে চাপ দিলেই অবশিষ্ট টাকা দেখায়)। ফলে কবে রিচার্জ করতে হবে সেটা বুঝতে পারবেন।
৪. বিল জমা দেয়ার ঝামেলা নেই।
ডিজিটাল মিটারের অসুবিধা

১. রিচার্জের সময় ভুল মোবাইল নম্বর দিলে টোকেন নম্বর ঐ নম্বরে চলে যাবে। আবার টোকেন নম্বরে ডিজিট থাকে অনেক গুলো (২০ ডিজিট)। এত গুলো ডিজিট মিটারে ইনপুট দিতে ঝামেলা হতে পারে। বিশেষ করে মুরুব্বিদের।
২. টাকা শেষ হলে যদি সময় মত রিচার্জ না করেন তাহলে কানেকশন স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। একবার বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সেটা আবার বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে সংযোগ নিতে হবে। অর্থ এবং হয়রানি দুইটাই হবেন।
৩. মিটারের ব্যাটারির চার্জ শেষ হলে নতুন ব্যাটারি লাগাতে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। অন্য কেউ লাগাতে পারে না। বিদ্যুৎ অফিস মানেই হয়রানি।
৪. টাকা রিচার্জ করলেই বিভিন্ন চার্জ কেটে নেয়। যদিও এটা আগের মিটারেও কাটত। কিন্তু এখন মোবাইলে মেসেজ আসে। দেখলেই খারাপ লাগে।
বিভিন্ন অসুবিধা সত্ত্বেও ডিজিটাল মিটারে সুবিধা বেশি। কেননা আপনি আপনার বিদ্যুৎ খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যেটা আগের মিটারে সম্ভব ছিল না।