পোষা পাখির এগ বাইন্ডিং

ডিম আটকে যাওয়া (Egg-binding) একটি গুরুতর এবং কখনো কখনো মারাত্মক সমস্যা যা প্রজননক্ষম বয়সের স্ত্রী পাখিদের মধ্যে ঘটে। এটি যে কোনো পাখির ক্ষেত্রে ঘটতে পারে, তবে সাধারণত ছোট প্রজাতির পাখিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, যেমন ফিঞ্চ, প্যারাকিট, লাভবার্ড, ক্যানারি, এবং ককাটিল।

পোষা পাখির এগ বাইন্ডিং

ডিম আটকে যাওয়া কী?

ডিম আটকে যাওয়া ঘটে যখন ডিম স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে পাখির শরীর থেকে বের হতে পারে না, যা প্রজাতি অনুযায়ী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা হতে পারে। এতে পাখি প্রচুর চাপ দেয় ডিম বের করার জন্য, এবং অনেক সময় মালিকেরা মনে করেন পাখিটি মলত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছে। ডিম আটকে যাওয়া পাখিকে অসুস্থ করে তোলে, তার ক্ষুধা নষ্ট হয়, পালক ফুলে যায়, এবং পেট ফুলে যেতে পারে। এছাড়া, মলত্যাগ এবং প্রস্রাব করাও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

ডিম আটকে থাকা অবস্থায় চিকিৎসা না করালে পাখিটি গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে এবং মৃত্যুও হতে পারে। তাই লক্ষণগুলি জানা এবং তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

ডিম আটকে যাওয়ার লক্ষণসমূহ

ডিম আটকে গেলে পাখির মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যেতে পারে:

  • দ্রুত বা কষ্টকর শ্বাস নেওয়া
  • পেট বা ভেন্ট ফুলে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • পালক ফোলা
  • চাপ দেওয়া
  • খাঁচার নিচে বসে থাকা
  • খোঁড়ানো বা পা অসাড় হওয়া
  • ক্ষুধা হারানো
  • হঠাৎ মৃত্যু

দ্রুত বা কষ্টকর শ্বাস নেওয়া

ডিম আটকে যাওয়া পাখিরা শ্বাস নিতে কষ্ট করতে পারে, বিশেষত খাঁচায় উড়ে বেড়ানোর পর। সামান্য কষ্টকর শ্বাসও ডিম আটকে থাকার লক্ষণ হতে পারে।

ফুলে যাওয়া

ডিম আটকে যাওয়া পাখির পেট ফুলে যেতে পারে এবং ভেন্টের চারপাশে ফুলে ওঠা দেখা যেতে পারে। 

কোষ্ঠকাঠিন্য

ডিম আটকে থাকা পাখির মলত্যাগ করতে অসুবিধা হতে পারে। যদি কোনো মল না হয় বা মল অস্বাভাবিক দেখায়, তাহলে তা ডিম আটকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে।

পালক ফোলা

এটি সাধারণ অসুস্থতার লক্ষণ হলেও ডিম আটকে থাকার ক্ষেত্রেও এটি দেখা যেতে পারে। খাঁচার নিচে বসে থাকা, ডিম আটকে গেলে পাখিরা খাঁচার নিচে বসে থাকতে পারে। 

খোঁড়ানো বা পা অসাড় হওয়া

ডিমের চাপে পাখির স্নায়ুতে চাপ পড়লে পাখির পা অসাড় হয়ে যেতে পারে।

ক্ষুধা হারানো

এটি সাধারণ অসুস্থতার লক্ষণ হলেও ডিম আটকে থাকলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে।

হঠাৎ মৃত্যু

দুঃখজনকভাবে, কখনো কখনো ডিম আটকে যাওয়ার একমাত্র লক্ষণ হতে পারে পাখির হঠাৎ মৃত্যু।

ডিম আটকে যাওয়ার কারণ

  • ডিমের আকার বড় হলে পাখির পক্ষে সহজে ডিম পারা সম্ভব হয় না।
  • পুষ্টির ঘাটতি, বিশেষত ক্যালসিয়ামের অভাব, ডিম আটকে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
  • প্রজনন তন্ত্রে সংক্রমণ, টিউমার বা প্রদাহও ডিম আটকে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

ডিম আটকে যাওয়ার চিকিৎসা

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। চিকিৎসা শুরু করার আগে পাখিটিকে প্রয়োজনীয় গরম রাখা হয়, তরল ও ক্যালসিয়াম দেওয়া হয়, এবং প্রয়োজনে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। 

প্রতিরোধ

সঠিক পুষ্টি এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ পাখিকে ডিম আটকে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। যেসব পাখি বারবার ডিম পারার প্রবণতা রাখে, তাদের ক্ষেত্রে পশুচিকিৎসক হরমোন ইনজেকশন দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। 

সতর্ক নজরদারি পাখির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন-

পোষা পাখির সিটাকোসিস রোগ

পাখির জন্য বিষাক্ত গাছপালা: সতর্ক থাকুন

পাখির সাধারণ রোগ এবং অসুস্থতা: সচেতনতা বৃদ্ধি করুন