আপনি কি আপনার বাগান, বারান্দা রঙিন করে তুলতে চান? তাহলে আপনাকে অবশ্যই বারোমাসি ফুল গাছের সম্পর্কে জানতে হবে। বারোমাসি ফুল গাছের প্রধান সুবিধা হল, এরা খুবই শক্ত ধরনের, সহজে মারা যায় না। অত বেশি যত্নও নিতে হয় না। সারা বছরই ফুটে বলে আপনার বাগান কখনো রঙহীন হয় না। এমন কি এই গাছ গুলোর জন্য অত বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না বলে সহজেই আপনার ছাদ বাগান বা বারান্দায় লাগাতে পারবেন।
চলুন আজ কিছু আকর্ষনীয় ফুল গাছ সম্পর্কে জানি যেগুলো সারা বছরই ফুল দেয়
১. গোলাপ
গোলাপ ভালোবাসে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। কী সৌন্দর্য, কী সুবাস- গোলাপ সবারই পছন্দের শীর্ষে।

প্রিয়জন কে ফুল উপহার দিতে চাইলে প্রথমেই গোলাপের নাম মনে আসে। আপনি চাইলে গোলাপ সারা বছরই আপনার বাগানে বা টবে ফুটবে। গোলাপ বেশ কষ্ট সহিষ্ণু গাছ। আমার একটা গাছ ছিল যেটার ডাল পর্যন্ত সুবাস ছড়াতো।
গোলাপের জন্য সূর্যের আলো গুরুত্বপূর্ণ। যদিও রোদ ছাড়াও ফুল ফুটে তবে পরিমাণে কম। গোলাপের জন্য বালু আর হালকা মাটি ছাড়া সব মাটিই উপযুক্ত। তবে দো আশ মাটিতে গোলাপ ভালো হয়। গোলাপের জন্য পানি নিষ্কান গুরুপূর্ণ। পানি জমে থাকলে গাছ মরে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।
পৃথিবীতে অনেক প্রজাতির গোলাপ পাওয়া যায়। আমাদের দেশেও পাওয়া যায়। তাই আর দেরি না করে আজই লাগিয়ে ফেলুন গোলাপের চারা।
২. জবা
ছোট বেলা থেকে জানতাম জবা দুই কালারের হয়- লাল বা রক্ত জবা আর গোলাপী কালারের। বাস্তবে কমলা, হলুদ আর একই ফুলে একাধিক কালারও পাওয়া যায়। আবার জবা গাছ অনেক বড় হয় বলে অনেকে মনে করে জবা বোধ হয় টবে লাগেনো যায় না। একে বারে ভুল ধারণা। জবা টবেও ভালো হয়।

যদিও যেকোনো মাটিতেই জবা হয়। তবে এসিডিক মাটি হলে ফুল ভালো আসে। গোলাপের মতই পানি জমে থাকে এমন মাটি পরিহার করতে হবে। ছায়াতেও জবা হয়। কাজেই আপনার বারান্দায়ও জবা তার সৌন্দর্য ছড়াতে প্রস্তুত।
৩. এডেনিয়াম
এডেনিয়াম পছন্দ করি এর কালার ভেরিয়েশন আর বনসাই করা যায় বলে। একে শুধু বাগানেই না আপনার ঘরেও রাখতে পারবেন। ছোট্ট একটা গাছে তিন চারটা ফুল ফুটে। এর জায়গা একেবারেই কম লাগে। কম বলতে আপনার পানি খাওয়ার মগেও একে রাখতে পারবেন।

৪. ইউফরবিয়া মিলি বা কাটা মুকুট
মিলি বা কাটা মুকুটের ডাল বা কান্ড আপনার টবে লাগিয়ে দিন। টবে পানি জমা যাবে না। কয়েক দিন পর থেকেই এরা ফুল দিতে শুরু করবে। অনেক গুলো কালার ভেরিয়েশন পাওয়া যায়। থাইল্যান্ডের গুলোর দাম একটু বেশি। সবুজ পাতার উপরে এদের দেখতে বেশ ভালো লাগে। ছাদ বা বারন্দার বাগানে কাটা মুকুট নেই মানে আপনার বাগানের অর্ধেক জৌলুশ নেই। সমস্যা একটাই, কান্ডে অনেক কাটা থাকে। বাসায় ছোট বাচ্চা থাকলে তাই লক্ষ্য রাখবেন যেন মিলির উপরে না পড়ে।

৫. অপরাজিতা
অপরাজিতা লতানো গাছ। আপনার বারান্দার বাগানের জন্য একেবারে পারফেক্ট। এর উজ্জ্বল নীল রঙের প্রশংসা করে না এমন মানুষ নেই। বীজ থেকে গাছ হয়। খুব বেশি যত্নও লাগে না। সাম্প্রতিক কালে অনেকেই অপরাজিতা ফুলের চা ও খান এর ভেষজ গুনের জন্য। আপনার বারান্দের গ্রিলে নীল অপরাজিতার দিকে না তাকিয়ে কেউ পারবেই না।

৬. রঙ্গন
রঙ্গন গাছ মূলত আমরা রাস্তার পাশের গাছ হিসেবে দেখে অভ্যস্ত। রঙ্গন কে আপনি টবেও লাগাতে পারেন। খুবই শক্ত টাইপের গাছ। লাল, গাঢ় লাল, হলুদ কালারের পাওয়া যায়। এক থোকা রঙ্গন ফুল মন ভালো করে দেয় নিমিষেই।

৭. সন্ধ্যা মালতী
গোলাপী, লাল, সাদা, লাল-সাদা মিক্সড কালারের সন্ধ্যামালতী পাওয়া যায়। বীজ থেকে গাছ হয়। একটাই সমস্যা, গাছ বড় হলে কেমন যেন ঝোপালো হয়ে যায়। তবে ফুলের কালার অসাধারণ!

টবের বা বাগানের বেশির ভাগ ফুল গাছ দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন টবে বা গাছের গোড়ায় পানি না জমে যায়। পানি জমে গেলে কান্ড বা মূল পচে গিয়ে গাছ মারা যেতে পারে। সার হিসেবে কম্পোস্ট সব চেয়ে ভালো। মাসে একবার ফানজিসাইড দিলে গাছে ফাঙ্গাস আক্রমন করে না।
আপনার রান্না ঘরে দৈনিক বিভিন্ন যে তরকারি কাটা হয় সেই তরকারির ধোয়া পানি আপনি গাছে দিতে পারেন। এটি ভালো সার হিসেবে কাজ করে। তাজা গোবরের চেয়ে পুরাতন গোবর সার হিসেবে উত্তম। আপনি যদি সিরিয়াসলি বাগান করে থাকেন তাহলে একটা ড্রামে গোবর জমা করে রাখতে পারেন। এতে সারা বছর আপনার সারের চিন্তা করতে হবে না।
উপরের গাছ গুলো ছাড়াও আরও অনেক গাছ রয়েছে যেগুলো সারা বছর ফুল দেয়। যেমন-



বেশ কয়েক ধরনের চামেলি আছে। এর মধ্যে সুবাস ছাড়া যেমন আছে তেমনই সুবাস সহ চামেলি ও আছে। সুবাস যুক্ত চামেলি অসাধারণ একটা ফুল।