বাংলাদেশের সরকারি চাকরি দুই ধরনের-
১. সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাকরি। এদের চাকরি নিয়ন্ত্রিত হয় সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ দ্বারা।
২. বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সরকারি দপ্তরের চাকরি। যেমন- আনবিক শক্তি কমিশন, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসিক ব্যাংক (এক মাত্র সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক) ইত্যাদি। এদের চাকরি নিয়ন্ত্রিত হয় নিজেস্ব নীতিমালা দ্বারা। যদিও এদের বেতন সরকারের রাজস্ব খাত থেকেই দেয়া হয়। কিন্তু এরা সরকারের কোন নীতিমালা বাস্তবায়ন করে না। এদের নির্দিষ্ট কাজ দেয়া আছে।
এই যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় এবং বিভাগে যারা নিয়োগ পায় তাদের মধ্যে ৯ম গ্রেড বা তদুর্ধ যারা আছে তাদের আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়-
১. ক্যাডার যা বিসিএস বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডার নামে পরিচিত।
২. নন ক্যাডার
ক্যাডার আর নন ক্যাডারের মধ্যে পার্থক্য কী?
ক্যাডার যারা আছেন তারা বিশেষ ট্রেনিং প্রাপ্ত হন এবং একটা নির্দিষ্ট কাজের জন্য দক্ষ হন। যেমন- বিসিএস কর ক্যাডার। কর ক্যাডারেরা সরকারের কর সংক্রান্ত কাজ করে থাকেন। ক্যাডাররা সরকারের নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে সাহায্য করেন। এরা তাদের নিজ নিজ অফিসে তদারকির কাজে থাকেন (জেনারেল ক্যাডাররা)। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোর কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যই এই ক্যাডার তৈরি করা হয়।
তাহলে নন ক্যাডার ৯ম গ্রেড বা তদুর্ধ কর্মকর্তারা কি করেন? সব মন্ত্রনালয় বা বিভাগ ক্যাডার অন্তর্ভূক্ত না। যে সকল মন্ত্রনালয় বা বিভাগ ক্যাডার অন্তর্ভূক্ত না সে সব অফিসের তদারকির কাজ এই নন ক্যাডাররা করে থাকেন। যেমন- শ্রম মন্ত্রনালয়, আইসিটি বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
বিসিএস ক্যাডার তালিকা
বিসিএস ক্যাডারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়-
১. জেনারেল ক্যাডার
২. টেকনিক্যাল ক্যাডার বা পেশাগত ক্যাডার
জেনারেল ক্যাডারে সবাই আবেদন করতে পারে কিন্তু টেকনিক্যাল বা পেশাগত ক্যাডারে সংশ্লিষ্ট বিষয় লাগে যেমন- বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারদের এমবিবিএস ডিগ্রী লাগে।
মোট ২৬ টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। এর মধ্যে ১৩ টি জেনারেল আর ১৩ টি টেকনিক্যাল বা পেশাগত ক্যাডার।
জেনারেল ক্যাডার কি কি
নিচের ১৩টি জেনারেল ক্যাডার-
১. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন)
২. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র)
৩. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (আনসার)
৪. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (নিরীক্ষা ও হিসাব)
৫. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সমবায়)
৬. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি)
৭. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিবার পরিকল্পনা)
৮. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বাণিজ্য)
৯. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (খাদ্য)
১০. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (তথ্য)
১১. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পুলিশ)
১২. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ডাক)
১৩. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর)
টেকনিক্যাল বা পেশাগত ক্যাডার কি কি
নিচের ১৩টি টেকনিক্যাল বা পেশাগত ক্যাডার-
১. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কারিগরি শিক্ষা)
২. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি)
৩. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বন)
৪. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সাধারণ শিক্ষা)
৫. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (স্বাস্থ্য)
৬. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পশু সম্পদ)
৭. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল)
৮. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (গণপূর্ত)
৯. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (রেলওয়ে প্রকৌশল)
১০. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক)
১১. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (সড়ক ও জনপথ)
১২.বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পরিসংখ্যান)
১৩. বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (মৎস্য)
এদের মধ্যে বিসিএস খাদ্য, রেলওয়ে ও বানিজ্যিক এবং তথ্য ক্যাডারে জেনারেল এবং টেকনিক্যাল উভয় পোস্টই আছে।
এডমিন ক্যাডার কি
সরকারের প্রশাসনিক কাজ এই ক্যাডারের অফিসাররা করে থাকেন। এরা সরকারের নীতি নির্ধারনে সাহায্য করেন। এডমিন ক্যাডারকে সব ক্যাডারের বস বলা হয়। কেননা সব সরকারি দপ্তরের শীর্ষস্থানীয় পদটি সবসময় এডমিন ক্যাডার থেকেই নিয়োগ হয়। সব দপ্তরের প্রশাসনিক প্রধান এডমিন ক্যাডার থেকে হয়।
মন্ত্রনালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর সব অফিসের প্রধান এডমিন ক্যাডার। ডিসি, ইউএনও এডমিন ক্যাডার। সরকারি বিভিন্ন আদেশ, পরিপত্র গেজেট এরাই জারি করেন।
এডমিন ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রীপরিষদ সচিব। মন্ত্রীপরিষদ সচিব কে সব সচিবদের সচিব বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবের বেতন যদিও মন্ত্রীপরিষদ সচিবের সমান কিন্তু পদমর্যাদা বা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে মন্ত্রীপরিষদ সচিব আগে থাকেন। মন্ত্রীপরিষদ সচিবের সমমানের আরেকটা পদ হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী কর্মকর্তা।
কোন ক্যাডারের ক্ষমতা বেশি
পুলিশের হাতে যেহেতু অস্ত্র থাকে কাজেই আমরা ধরে নেই যে পুলিশের ক্ষমতা বেশি। আসলে সব ক্ষমতা এডমিন ক্যাডারের হাতে। প্রশাসনিক সব কিছু এদের দিয়ে করানো হয়। মোবাইল কোর্ট দিয়ে হয়তো অভিযান করতে পারে। কিন্তু মূল প্রশাসনিক ক্ষমতা এদের কাছে। অফিসিয়াল যেকোনো কাজ এদের মাধ্যমে নিষ্পন্ন হয়। কাজেই সরাসরি ক্ষমতা না থাকলেও মূল ক্ষমতাধারী এরাই।
একটা জেলার যত সরকারি অফিস আছে সব অফিসকে চাইলে ডিসি ডেকে কৈফিয়ত চাইতে পারেন। একটা জেলার সরকারি যত ব্যয় হয় সেটা ডিসির মাধ্যমে হয়। ডিসি জেলা ত্রান কমিটির প্রধান। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ডিসি ৩৪টা দায়িত্ব পালন করেন।
আবার প্রমোশনের দিক থেকেও এডমিন ক্যাডার এগিয়ে। এদের প্রমোশন কখনো থেমে থাকে না। একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রমোশন হয়। যেটা অন্য ক্যাডারে হয় না।
বিসিএস পরীক্ষা কি
বিসিএস ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষাই বিসিএস পরীক্ষা। বিসিএস পরীক্ষা মোট তিন ধাপে হয়-
১. ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা।
২. ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। যদি টেকনিক্যাল বা পেশাগত চয়েস দেন তাহলে আরও ২০০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষার পাশ মার্ক ৫০%।
৩. ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষার পাশ মার্ক ৫০%।
প্রিলিমিনারি পাশ করলে লিখিত পরীক্ষা দিতে পারবেন। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলে মৌখিক পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হবেন। মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করলে যদি ক্যাডার না পান তাহলে নন-ক্যাডার ৯ম এবং ১০ম গ্রেডের জন্য বিবেচিত হবেন।
যদি পিএসসিতে বিভিন্ন দপ্তরের নন ক্যাডারের চাহিদাপত্র থাকে তখন পিএসসি এই নন ক্যাডার লিস্ট থেকে নিয়োগ দেয়।