বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণা করে দেখতে পেয়েছেন যে প্রতিদিন খাবারের যদি সামুদ্রিক মাছ থাকে তাহলে আমরা অনেক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আমাদের দৈনন্দিন যে পুষ্টি উপাদান গুলো লাগে যেমন, ভিটামিন, মিনারেল এগুলো আমাদের স্বাভাবিক খাবারে অনেক কম পরিমানে থাকে। কিন্তু সামুদ্রিক মাছ বা অন্যান্য খাবারে এদের পরিমান অনেক অনেক বেশি।

যেমন- সামুদ্রিক চিংড়িতে আমিষের পাশাপাশি বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমান (প্রতি 85 গ্রাম রান্না চিংড়ীতে) আমাদের স্বাভাবিক খাবারের চেয়ে
৩৫০০% বেশি ভিটামিন বি টুয়েলভ
৯৯% বেশি সেলেনিয়াম
২১% বেশি জিংক থাকে এবং
১৩% আয়রন থাকে
আবার ১৫৪ গ্রাম সামুদ্রিক স্যামন মাছে আমরা দৈনিক যে স্বাভাবিক খাবার খাই তার চেয়ে
১৯৬% বেশি ভিটামিন বি ১২
১৩১% বেশি সেলেনিয়াম
৮৫% বেশি ভিটামিন বি ৬
২১% বেশি পটাশিয়াম থাকে।
এই উপাদান গুলো যদি আমাদের শরীরে কম থাকে তাহলে আমাদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা যায়। যেমন-যেমন অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা, বিষন্নতা গর্ভবতী নারী, বয়স্ক মানুষ, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা এরা অধিকাংশ সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের অভাবে ভোগেন ফলে তাদের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। এদের জন্য সামুদ্রিক মাছ খুবই উপকারী।

সামুদ্রিক মাছ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড এর অন্যতম প্রধান উৎস। ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড এর অন্যতম দুটি প্রধান উপাদান হচ্ছে ডি এইচ এ এবং ই পি এ। এই দুটি উপাদান আমাদের স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন স্নায়ু কোষ এর কাজ ভালোভাবে করা, আমাদের হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে এবং স্নায়তন্ত্র কে সুস্থ।
রাখে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার খান তাদের হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম। ২০২০ সালে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যে মানুষগুলো বেশি পরিমাণে সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করেছে তারা করোনারি হার্ট ডিজিজ হার্ট, অ্যাটাক হার্ট, ফেইলিওর, স্ট্রোক, ডিপ্রেশন এবং লিভার ক্যান্সারের মতো রোগে কম আক্রান্ত হয়েছে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে যারা বেশি পরিমাণে সামুদ্রিক মাছ খান তাদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির রোগের থেকে মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিবেশী গ্রাম সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার জন্য হার্টের রোগের ঝুকি ৪% পর্যন্ত কমে যায়।
সামুদ্রিক মাছের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে কিনা
যেকোনো খাবার সেটা মুরগি, মাছ বা আলু যাই হোক না কেন যখনই ভাজা হয় তখন কিছু খারাপ রাসায়নিক যৌগ তৈরি হয়। আমিষ জাতীয় খাবার যেমন মাছকে যদি ভাজি করা হয় তাহলে হেটারোসাইক্লিক অ্যামিন, অ্যাক্রেলিক অ্যালডিহাইড, পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়। এই যৌগ গুলো ক্যান্সার এর মত জীবননাশী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
আরেকটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে, বিভিন্ন মাছ বা মাংস ভাজি করে খেলে ফুসফুস এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ২০০৯ সালে ১০৬৬৯৯ জন পোস্টমেনোপজাল নারীর ওপর সমীক্ষা করে দেখা গেছে যে যারা ভাজা মাছ এবং ফ্রাইড চিকেন খেয়েছে তাদের ১৩% বেশি হার্ট ডিজিজ এর আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্রাইড চিকেন বা মাছ যে শুধুমাত্র হার্ট ডিজিজ এর ঝুঁকি বাড়ায় তা নয়। এর বাইরেও হাই ব্লাড প্রেসার এবং ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছে পারদ এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এই মার্কারি যদি প্রেগন্যান্ট মহিলাদের শরীরে প্রবেশ করে তাহলে তার গর্ভের সন্তানের বিভিন্ন বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। এমন কি বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মা যদি পারদযুক্ত খাবার খান তাহলে বুকের দুধের মাধ্যমে তা শিশুর শরীরে চলে যায়। পারদ শিশুদের জন্য খুবই মারাত্মক বিষ। এর ফলে শিশুরা বিকলাঙ্গ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে।
সবচেয়ে বেশি পারদের উপস্থিতি নিচের মাছ গুলো পাওয়া গিয়েছে-
টুনা
কিং ম্যাকেরেল
হাঙর
টাইলফিস
টুনা মাছ কে খাবারের মাধ্যমে পারদ দূষনের প্রধান কারন বলে ধরে নেয়া হয়।
যে মাছ গুলোতে পারদের উপস্থিতি কম রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-
ট্রাউট
কড
হেডেক
হেরিং
স্যামন
সার্ডিন ইত্যাদি।
সামুদ্রিক মাছে প্লাস্টিকের উপস্থিতি
আমরা আমাদের সবকিছু সমুদ্র ফেলি। আমাদের প্রত্যেক দিন হাজার হাজার টন প্লাস্টিক লাগে। প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র সাগরে গিয়ে পড়লে ধীরে ধীরে সামুদ্রিক মাছের দেহেও এই প্লাস্টিক ঢুকে যায়।সামুদ্রিক মাছ খেলে তখন সেই প্লাস্টিক আমাদের শরীরে ঢুকে যেতে পারে।
সামুদ্রিক মাছ বা অন্যান্য প্রানী খাওয়া কি হালাল
হ্যা। সমুদ্রের সব কিছুই হালাল। আল্লাহ সুরা আল মায়িদাতে (৫ঃ৯৬) সমুদ্রের সব কিছুকে হালাল বলেছেন।
প্রথম বার যখন কক্সবাজার আর সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম সেবার কাকড়া বা অক্টোপাস খাওয়া হালাল হবে কি না এই ভয়ে খাইনি।
অতিরিক্ত সামুদ্রিক মাছ আহরনের ফলে কিছু কিছু মাছ আজ বিলুপ্তির পথে। তাছাড়া সঠিকভাবে রান্না না করলে সামুদ্রিক মাছ উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে। কাজেই আমাদের সাবধানতার সাথে সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত।