বাইক যেমন কাজের জিনিস, তেমনি অনেকের কাছে শখের জিনিসও বটে! বাইক নিতে গেলে সবার মনেই প্রথম যে প্রশ্নটা আসে- কোন বাইক ভালো? শখ বলেন আর প্রয়োজন বলেন, টাকা দিয়ে একটা জিনিস নিতে গেলে যাচাই বাছাই করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ভালোর তো শেষ নেই। আবার বাইকের বিভিন্ন সেগমেন্টের উপর ভিত্তি করে ভালো মন্দের পার্থক্য হয়। এই আর্টিকেলে মূলত আমরা ১৫০ সিসি সেগমেন্টের বাইকের ভালো মন্দ সম্পর্কে জানব। আর্টিকেলটি লিখেছি দামের সাথে বাইকের পারফরম্যান্সের কথা মাথায় রেখে। প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বাইক গুলো নিয়ে আপাতত লিখছি না। আমাদের দেশে প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বাইক পাওয়াই যায় কম। আর যারা প্রিমিয়াম সেগমেন্টের বাইক নিতে চান, তারা আমার মতে আমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি দক্ষ আর এক্সপার্ট।
বাজেট অনুযায়ী সেরা বাইক কোন গুলো
সেরা বাইকের স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে নিচের বিষয় গুলো মাথায় রেখেছি-
১. ইঞ্জিনের শক্তি
২. ব্রেকিং সিস্টেম
৩. কন্ট্রোলিং
৪. রাইডিং কম্ফোর্ট
৫. বিল্ড কোয়ালিটি
৬. দামের সামঞ্জস্য
১. সুজুকি জিক্সার মনোটোন
১. ইঞ্জিনের শক্তি: 154.9 সিসির ইঞ্জিন, ৮০০০ আরপিএমে ১৪.৮ BHPs পাওয়ার আউটপুট পাওয়া যায়, ৬০০০ আরপিএমে 14 Nm টর্ক দিতে পারে। যেটা এই বাজেটে বেশ ভালো একটা অপশন। বাইকের এক্সিলারেশন ভালো। ফলে দ্রুত যদি গতি বাড়াতে চান তাহলে সুজুকি জিক্সার মনোটোন একটা ভালো অপশন।
২. ব্রেকিং সিস্টেমঃ ফ্রন্ট বা সামনের চাকায় ডিক্স পেছনের চাকায় ডিক্স আর ড্রাম দুইটিই পাওয়া যায়।
৩. কন্ট্রোলিংঃ ভালো। Apache 4V টানের সাথে কন্ট্রোলিং এর যে সমস্যা আছে সেটা জিক্সার মনোটোনে নেই।
৪. রাইডিং কম্ফোর্টঃ ভালো
৫. বিল্ড কোয়ালিটিঃ ভালো
৬. দামের সামঞ্জস্যঃ আগে এই বাইকটা ১ লাখ ৭৫ হাজারে পাওয়া যেত। সেটা এখন বাড়িয়ে ১ লাখ ৯৫ হাজার করেছে। আগের দামের সাথে একটা সামঞ্জস্য ছিল। বর্তমান প্রাইসটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।
এই বাজেটে বেশ ভালো একটা অপশন। বাইকের এক্সিলারেশন ভালো। ফলে দ্রুত যদি গতি বাড়াতে চান তাহলে সুজুকি জিক্সার মনোটোন একটা ভালো অপশন।
২. হোন্ডা এক্সব্লেড
১. ইঞ্জিনের শক্তি: 162.7 সিসির ইঞ্জিন, 8500 আরপিএমে 13.9 BHP পাওয়ার আউটপুট পাওয়া যায়, ৬০০০ আরপিএমে 13.9 Nm টর্ক দিতে পারে।
২. ব্রেকিং সিস্টেমঃ ফ্রন্ট বা সামনের চাকায় ডিক্স পেছনের চাকায় ডিক্স আর ড্রাম দুইটিই পাওয়া যায়। এক্সব্লেডের রিসেন্টলি এবিএস সহ পাওয়া যায়।
৩. কন্ট্রোলিংঃ ভালো
৪. রাইডিং কম্ফোর্টঃ ভালো
৫. বিল্ড কোয়ালিটিঃ ভালো
৬. দামের সামঞ্জস্যঃ আগে এই বাইকটা ১ লাখ ৮০ হাজারে সিংগেল ডিক্স। যদি এবিএস সহ নেন তাহলে ২০৩৯০০/- পড়বে। দাম হিসেবে ঠিকই আছে।
এক্সব্লেডের লুকিংটা জোশ। একটা রাফ লুকিং আছে। এছাড়া এই সেগমেন্টের অন্যান্য সব বাইকের তুলনে এর মাইলেজ সব চেয়ে ভালো, প্রতি লিটারে ৫০ কিমি এর উপরে যায়। ইন্সট্যান্ট এক্সিলারেশন জিক্সারের মত পাবেন না। তবে একেবারে খারাপও না।
৩. হোন্ডা সিবি হর্নেট ১৬০ আর
১. ইঞ্জিনের শক্তি: 162.7 সিসির ইঞ্জিন, 8500 আরপিএমে 14.9 BHP পাওয়ার আউটপুট পাওয়া যায়, ৬০০০ আরপিএমে 14.5 Nm টর্ক দিতে পারে।
২. ব্রেকিং সিস্টেমঃ ফ্রন্ট বা সামনের ও পেছনে দুই চাকাই ডিক্স। হোন্ডা হর্নেটে এখন সিবিএস ব্রেকিং সিস্টেম আছে। যেটা এবিসের মত অতটা না হলেও ইমারজেন্সিতে বেশ ভালো কাজ করে।
৩. কন্ট্রোলিংঃ ভালো
৪. রাইডিং কম্ফোর্টঃ ভালো
৫. বিল্ড কোয়ালিটিঃ ভালো
৬. দামের সামঞ্জস্যঃ ২ লাখ ৯০০ টাকা।
আপনি যদি ইনস্ট্যান্ট এক্সিলারেশন চান তাহলে হর্নেট আপনার জন্য না। এটা স্মুথ রাইডার দের জন্য। উরাধুরা টান এই বাইকে পাবেন না।
৪. হিরো থ্রিলার ১৬০ আর
১. ইঞ্জিনের শক্তি: 163 সিসির ইঞ্জিন, 8500 আরপিএমে 15 BHP পাওয়ার আউটপুট পাওয়া যায়, ৬০০০ আরপিএমে 14 Nm টর্ক দিতে পারে।
২. ব্রেকিং সিস্টেমঃ ফ্রন্ট বা সামনের ও পেছনে দুই চাকাই ডিক্স। ফ্রন্ট হুইলে সিংগেল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম আছে।
৩. কন্ট্রোলিংঃ ভালো
৪. রাইডিং কম্ফোর্টঃ ভালো
৫. বিল্ড কোয়ালিটিঃ ভালো
৬. দামের সামঞ্জস্যঃ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা।
আপনি যদি ইনস্ট্যান্ট এক্সিলারেশন চান তাহলে থ্রিলার আপনার জন্য না। এটা স্মুথ রাইডারদের জন্য। উরাধুরা টান এই বাইকে পাবেন না। ফুয়েল ইঞ্জেকশন টেকনোলজি ব্যবহার করার ফলে হিরো থ্রিলার বেশ তেল সাশ্রয়ী। অনায়াসে ৫৫ কিমি যেতে পারবেন। তবে লুক নিয়ে অনেকেরই আপত্তি করতে দেখেছি। যদিও লুকের ব্যপারটা একান্তই ব্যক্তিগত।
এছাড়াও বাজাজ পালসার ডুয়েল ডিক্স একটা ভালো বাইক। যদিও অনেকেই এখন ওটা কে আংকেলদের বাইক বলে। কিন্তু পালসার তো পালসারই।
বাইক কিনতে গিয়ে কখনোই ভালো বাইক খুজবেন না। সব বাইকেরই ভালো মন্দ দিক আছে। কোনটাই টোটাল প্যাকেজ না। আবার হয়ত আপনি একটা বাইক কিনবেন বলে মনস্থির করেছেন, কিন্ত টেস্ট ড্রাইভ বা বাইকের উপরে বসে দেখলেন যে ঠিক কম্ফোর্ট পাচ্ছেন না বা দেখতে ভালো লাগছে না।
তাই বাইক নেয়ার আগে টেস্ট ড্রাইভ দিয়ে দেখুন। সমস্যা মনে হলে অন্য বাইক নিবেন।
হ্যাপি রাইডিং!