পোষা পাখির সিটাকোসিস রোগ

সিটাকোসিস, যাকে সাধারণভাবে প্যারট ফিভার বা এভিয়ান ক্লামাইডিওসিস বলা হয়, পাখিদের একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এটি Chlamydophila psittaci নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে, যা প্রায় ৪০০ প্রজাতির পাখিকে সংক্রমিত করতে পারে। এই রোগটি শুধু পাখিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে, যার ফলে এটি একটি জুনোটিক (মানুষ ও প্রাণীদের মধ্যে ছড়াতে সক্ষম) রোগ হিসাবে পরিচিত।  

পোষা পাখির সিটাকোসিস রোগ

সিটাকোসিসের উপসর্গ  

পাখির ক্ষেত্রে সিটাকোসিসের উপসর্গগুলি বেশ বৈচিত্র্যময় হতে পারে। অনেক সময় এই রোগটি গোপনে থাকে এবং কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে আক্রান্ত পাখিরা সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখাতে পারে:  

  • ফুলে থাকা চোখ  
  • ঝিমানো
  • ক্ষুধা হ্রাস এবং ওজন কমে যাওয়া  
  • পালক ফুলিয়ে রাখা  
  • নাসারন্ধ্র থেকে স্রাব  
  • অস্বাভাবিক মল, সাধারণত সবুজ বা হলুদ রঙের  

যদিও অনেক পাখি সুপ্ত অবস্থায় রোগটি বহন করতে পারে, মানসিক চাপ বা শারীরিক দুর্বলতার কারণে এই রোগের লক্ষণগুলো হঠাৎ দেখা দিতে পারে। এ কারণে পাখির মালিকদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।

পোষা পাখির সিটাকোসিস রোগ

রোগের কারণ  

সিটাকোসিস মূলত সংক্রামিত পাখির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও, পাখির মল, পালক, এবং খাবার বা পানি দূষিত হলে তা থেকে অন্য পাখিরা সংক্রমিত হতে পারে। খারাপ বাতাসের প্রবাহ বা একটি বন্ধ ঘরে থাকা পাখির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। আক্রান্ত পাখি থেকে রোগটি সহজেই মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে।  

রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা  

সিটাকোসিসের লক্ষণগুলি অনেক অন্যান্য রোগের মতো দেখতে হওয়ায় সঠিক নির্ণয়ের জন্য বিশেষ পরীক্ষা প্রয়োজন। সাধারণত রক্ত পরীক্ষা, মল পরীক্ষা, এবং বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত করার মাধ্যমে রোগটি নির্ণয় করা হয়। একবার রোগটি নিশ্চিত হলে, ডক্সিসাইক্লিন নামক একটি বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক ৪৫ দিনের জন্য পাখিকে খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।  

প্রতিরোধ ও সুরক্ষা  

সিটাকোসিস প্রতিরোধ করার জন্য পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাখির খাঁচা, খাবারের পাত্র এবং অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। নতুন পাখি গ্রহণের ক্ষেত্রে, অন্য পাখির সঙ্গে একত্রে রাখার আগে ৩০ দিনের কোয়ারেন্টাইন প্রয়োজন। সংক্রমিত পাখিদের দ্রুত আলাদা করে ফেলা উচিত এবং ঘরের ভিতরে সঠিক বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিত করা উচিত।

মানুষের মধ্যে সংক্রমণ  

এই রোগটি মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে এবং ফ্লুর মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে আসা মানুষদের মধ্যে সাধারণত জ্বর, ঠান্ডা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এবং মাংসপেশীতে ব্যথা হতে পারে। তাই পাখির যত্ন নেওয়ার সময় মাস্ক ও গ্লাভস পরা এবং ভালোভাবে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উপসংহার  

সিটাকোসিস একটি মারাত্মক রোগ যা পাখি এবং মানুষের উভয়ের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। সঠিক যত্ন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, এবং দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের সংক্রমণ এবং ঝুঁকি কমানো সম্ভব। যদি আপনার পাখি সিটাকোসিসের কোনো উপসর্গ দেখায়, তবে দেরি না করে অবিলম্বে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  

নোট: আপনার পোষা পাখি যদি অসুস্থ হয় বা এই রোগের উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত পশুচিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

আরও পড়ুন-

পাখির জন্য বিষাক্ত গাছপালা: সতর্ক থাকুন

পাখির সাধারণ রোগ এবং অসুস্থতা: সচেতনতা বৃদ্ধি করুন

পাখির মলের পর্যবেক্ষণ: আপনার পোষা পাখির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা