বিসিএসে শর্টকাট বলে কোন কথা নেই। বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, বড় ভাইরা অনেক কথা বলবে যে তারা এক মাস প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস প্রিলিমিনারি পাশ করেছে। তারা ১০০% চাপা মেরেছে। আপনাকে নূন্যতম ছয় মাস সময় নিয়ে শুরু করতে হবে যদি রিলাক্সে প্রস্তুতি নিতে চান। টাইট শিডিউল হলে তিন মাস অবশ্যই লাগবে।
কীভাবে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করবেন
প্রথমেই আজেবাজে সময় নষ্ট হয় এমন কাজ বাদ দিন। ফেসবুকের আজাইরা পোস্ট করা আর পড়া বাদ দিন। মনটাকে শান্ত করুন। এমন কিছু বন্ধু/সিনিয়র/জুনিয়র জুটিয়ে ফেলুন যারা বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিবে। ঘুষ ছাড়া সরকারি চাকরি হয় না, বিসিএস অনেক কঠিন এই ধরনের নেগেটিভ কথা যারা বলে তাদের এড়িয়ে চলবেন। জীবনটাকে একটা রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসুন। খাবার সময় মত খান, সময় মত ঘুমান, আড্ডা দিন, বন্ধু/বান্ধবীকে সময় দিন। নির্দিষ্ট সময় ফেসবুক/ইউটিউব দেখুন।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য কি কি বই কিনব
অধিকাংশ ক্ষেত্রে নতুনরা প্রথম ভুলটা করে বই কিনতে যেয়ে। এক গাদা বই কেনার দরকার নাই। নিচের লিস্ট অনুযায়ী বিসিএস প্রিলিমিনারির বই নিতে পারেনঃ
১. বাংলাদেশের সংবিধান। পকেট এডিশন হলে ভালো হয়।
২. জব সলুশন। আপনার সাথে আর যারা প্রস্তুতি নিবেন তারা সবাই একই এডিশনের একই প্রকাশনীর বই কিনবেন। প্রফেসর বা ওরাকল। ধরেন সবাই প্রফেসর কিনেছেন তাহলে সবাই মিলে এক কপি ওরাকল নিতে পারেন। এটা শুধুমাত্র ক্রস চেক করার জন্য।
৩. English for Competitive Exam।
৪. বিষয় ভিত্তিক mp3 গাইড।
৫. দৈনিক যেকোনো একটা পেপারের প্রথম, শেষ, আন্তর্জাতিক, খেলা, সম্পাদকীয় পাতা পড়বেন।
কারেন্ট এফেয়ার্স কেনার দরকার নাই।

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বইপত্র কিনেছি, শুরু করব কোত্থেকে
প্রিলিমিনারি পরীক্ষার উত্তর পত্র ইন্টারনেটে পাবেন। এক কপি প্রিন্ট করে ৫০ কপি ফটোকপি করে নিন।
মোটামুটি নিরিবিলি ২ ঘন্টা সময় বের করুন। জব সলুশন বইটা নিয়ে লাস্ট পাঁচটা বিসিএসের যেকোনো একটার পরীক্ষা দিতে বসে যান। মোবাইল অফ রেখে পরীক্ষা দিতে বসে যাবেন।
সময় শেষ হলে উত্তর মিলিয়ে দেখুন। যে প্রশ্নের উত্তর ভুল হয়েছে সেগুলো বিষয় ভিত্তিক mp3 বইয়ে যে চ্যাপ্টারে আছে সে চ্যাপ্টার পড়ুন। ধরুন, প্রশ্নে ছিল পি এস সি সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গঠিত হয়? উত্তর আপনি জানেন না। কাজেই mp3 বইয়ের সংবিধান চ্যাপ্টারে চলে যাবেন, সেখানে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে লেখা আছে। কর্মকমিশন, ন্যায়পাল, নির্বাচন কমিশনের ধারা পড়ে ফেলুন। এভাবে সংবিধান আপনার আয়ত্তে চলে আসবে। শুরুতেই সংবিধান খুলে মুখস্থ করার দরকার নাই।
২৮ তম বিসিএস থেকে সাম্প্রতিক যে বিসিএস প্রিলিমিনারি হয়েছে তার সব প্রশ্ন মুখস্থ করে ফেলুন (আবার অংক মুখস্থ করতে যাবেন না)। এর মধ্যে থেকে আপনি কমপক্ষে ৮০-৯০ টা প্রশ্ন কমন পাবেন। কোন ভাবেই যেন এই প্রশ্ন গুলো মিস না হয়।
কিছু দিন পড়তে থাকুন। একটা সময় পরে নিজেই প্রশ্নের ধারা বুঝে যাবেন। তখন বিষয় ভিত্তিক পড়া শুরু করবেন। এরপর অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন গুলো সমাধান করবেন। মোট কথা জব সলুশনে যত গুলো প্রশ্ন দেয়া থাকবে সব গুলোই যেন আপনার জানা থাকে।
অংক বারবার করতে হবে। এটার কোন বিকল্প নাই। ইংরেজি গ্রামার নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নাই। যে প্রশ্ন গুলো আসে সেগুলোই বারবার পড়ুন।
কিছুই মনে থাকে না, বারবার পড়ার পরেও ভুলে যাই
গ্রুপ তৈরি করে ফেলুন। দুইজন হলেও হবে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা বিষয় একজন পড়বেন অন্যজন শুনবেন।
নিয়মিত পরীক্ষা দিন। গ্রুপমেট কে বলুন কাল আপনি ৩০-৩৫ বিসিএসের বিজ্ঞানের উপর প্রশ্ন ধরবেন। তেমনি গ্রুপমেট আপনাকে প্রশ্ন করবেন। এভাবে খুব ভালো প্রিপারেশন হয়।
পঞ্চাশটা প্রশ্ন-উত্তর মোবাইলে রেকর্ড করে নিন। পড়তে ইচ্ছা না করলে হেড ফোনে রেকর্ড করা প্রশ্ন-উত্তর শুনুন।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরীক্ষার হলের জন্য বিশেষ টিপস
খুব ভালো প্রস্তুতি নিলেই কি আপনি বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পাশ করবেন? কখনোই না। পরীক্ষার দুই ঘন্টা সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অবশ্যই যা করবেনঃ
১. মাথা ঠান্ডা রাখুন। প্রশ্ন কঠিন মানে সবার জন্যই কঠিন।
২. বসার সিট দেখে নিন। নড়বড়ে হলে গার্ড দেয়া টিচারকে জানান।
৩. প্রশ্নে ক, খ, গ, ঘ সিরিয়াল কিভাবে আছে দেখে নিন। অনেক সময় ক এর ডানে না দিয়ে নিচে খ দেয়।
অবশ্যই যা করবেন নাঃ
১. নিশ্চিত না হয়ে কোন উত্তর দিবেন না। কোনভাবেই না। লোভ সামলানো কঠিন কিন্তু অনুমানের উপর উত্তর একেবারে নিষিদ্ধ।
২. অংক আগে করবেন না। যত ভালো অংকই পারেন না কেন।
৩. উত্তর না জানলে ঘাবড়ে যাবেন না। ৩৫ তম বিসিএস এ আমি প্রথম ৬০ টা প্রশ্নের মধ্যে ২টা দিতে পেরেছিলাম।
৪. অন্যের কাছে কোন উত্তর জানতে চাইবেন না।
মনে রাখবেন ঐ ২ ঘন্টা সময়ে যত মাথা ঠান্ডা রাখবেন ততই ভালো করবেন। সব শেষ হলে গুনে দেখুন কমপক্ষে ১১০টা উত্তর সঠিক হয়েছে কি না। ১১০ টা হলে ধরে নিতে পারেন আপনি প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ করবেন। প্রশ্ন যত সহজই হোক না কেন ১১০ হল স্ট্যান্ডার্ড পাশ মার্ক।
বিতর্কিত প্রশ্ন গুলো বা ভুল প্রশ্ন গুলো বাদ দিয়েই পিএসসি রেজাল্ট তৈরি করে। সুতরাং ওগুলো নিয়ে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই।
নৈতিকতা ও মূল্যবোধের উত্তর গুলো বইয়ে যেভাবে আছে সেভাবে দিন। আপনার কাছে যা সঠিক মনে হয় পিএসসি কিন্তু সেটা সঠিক মনে নাও করতে পারে।
এভাবে প্রস্তুতি নিলে আপনার প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রস্তুতি সহজ হবে বলে আশা করি।
সারসংক্ষেপঃ
১. আড্ডা কমিয়ে দিতে হবে। আজেবাজে সময় নষ্ট করা যাবে না।
২. স্টাডি গ্রুপ করতে হবে। সদস্য দুই জন হলেও হবে।
৩. সংবিধান, জব সলুশন, mp3, English for competitive exam বই কিনুন।
৪. ২৮ তম বিসিএস থেকে সাম্প্রতিক সময়ে যে বিসিএস হয়েছে তার প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন সলভ করবেন। কোন প্রশ্ন যেন মিস না হয়।
৫. আগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন থেকে যেগুলো পারবেন না সেগুলো mp3 থেকে দেখে নিবেন।
৬. নিয়মিত যেকোনো একটা পত্রিকার প্রথম পাতা, শেষ পাতা, আন্তর্জাতিক, মতামত ও খেলা এই পেজ গুলো পড়বেন।
৭. অংক নিয়মিত লিখে লিখে প্র্যাকটিস করবেন।
৮. ইংরেজি গ্রামার মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই।
৯. যে বিষয় গুলো পরিবর্তন হয় যেমন- জাতিসংঘের মহাসচিব ২০১০ সালে ছিলেন একজন এখন অন্যজন, এরকম প্রশ্ন গুলোর আপডেট উত্তর জেনে নিবেন।
১০. গ্রুপ স্টাডি করুন। একজন পড়বেন অন্যজন শুনবেন। নিয়মিত পরীক্ষা দিবেন।
১১. নিশ্চিত না হয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দিবেন না। অন্যের কাছে কোন উত্তর জানতে চাইবেন না।
১২. মনে রাখবেন যেকোনো ধরনের প্রশ্নের জন্য ১১০ হল স্ট্যান্ডার্ড পাশ মার্ক। অন্যের কথায় কান দিবেন না। কঠিন প্রশ্ন সবার জন্যই কঠিন হবে।
বিসিএস থেকে শুধুমাত্র ক্যাডার সার্ভিসেই যে জয়েন করার সুযোগ আছে তা কিন্তু না। বর্তমানে নন ক্যাডারে ৯ম ও ১০ম গ্রেডে ৮০% নিয়োগ হয় এই বিসিএসে যারা ক্যাডার পান না কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় পাস করেন তাদের থেকে। আপনি যদি ক্যাডার নাও পান তাহলে ধরে নিতে পারেন নন ক্যাডারে কোন না কোন একটা চাকরি পাবেন। এটা একটা বিশাল সুযোগ। কাজেই বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য সিরিয়াসলি প্রস্তুতি নিন, নিজের বেকারত্ব দূর করুন, বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটান!