ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে ব্লগিং দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতিদিনই নতুন অনেকেই ব্লগিংয়ের সাথে নিজেকে যুক্ত করছেন। ব্লগিংয়ের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কীওয়ার্ড রিসার্চ করা। সঠিক ভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ না করলে ব্লগিংয়ে সফলতা পাওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। নতুনদের মধ্যে তাই প্রথমেই যে প্রশ্ন আসে-কিভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করতে হয়?
চলুন আজ কীওয়ার্ড রিসার্চের ফ্রি কিছু টেকনিক শিখে নেই।
কীওয়ার্ড কি?
ধরুন আমি জানতে চাইছি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কেন লাগল? এজন্য মোবাইল বা কম্পিউটারে ব্রাউজার ওপেন করে গুগলে সার্চ করব- ‘রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ’। এই “রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ”ই হল কীওয়ার্ড। অর্থাৎ ইন্টারনেটে আমরা যা লিখে খুজি তাই কীওয়ার্ড।
কিওয়ার্ড দুই ধরনের
১. শর্ট টেইল কিওয়ার্ড। যেমন- “রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ”।
২. লং টেইল কিওয়ার্ড। যেমন- “রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কেন লাগল?” অর্থাৎ শর্ট টেইল কিওয়ার্ডের সাথে আরও শব্দ যুক্ত হয়ে লং টেইল কিওয়ার্ড হয়। একে LSI (Latent Search Intent) কিওয়ার্ড ও বলে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমরা আরও যা যা জানতে চাই কিন্তু গুগলে সরাসরি সার্চ করি না সেটাই LSI কিওয়ার্ড।
কীওয়ার্ড রিসার্চ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কীওয়ার্ড রিসার্চের গুরুত্ব লিখতে গেলে দুই তিন হাজার শব্দেও শেষ হবে না। সংক্ষেপে একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করি।
আমরা যখন গুগলে কোন কোন কিছু লিখে সার্চ দেই গুগল তখন ইন্টারনেটে থাকা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সেই কীওয়ার্ড রিলেটেড আর্টিকেলগুলো আমাদের দেখায়। গুগলের প্রথম পেজে মোট দশটি ওয়েবসাইটের আর্টিকেলের লিংক শো করে। ইংরেজিতে বা ব্লগিং এ এই ১০টি রেজাল্টকে Search Engine Result Page বা সংক্ষেপে SERP রেজাল্ট বলে। ব্লগিং এর দুনিয়ায় SERP একটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ।
বেশিরভাগ সময় আমরা যা করি, প্রথম যে ওয়েবসাইটটি আছে সেই সাইটে ক্লিক করে ঢুকি। যদি আমরা যা জানতে চাইছি তা যদি ওই আর্টিকেলে থাকে তাহলে আর দ্বিতীয় লিংকে ক্লিক করি না। যদি এমন হয় আমরা যদি যা জানতে চাইছি তা যদি প্রথম আর্টিকেল ফুলফিল না করে তখন আমরা দ্বিতীয় লিংকে যাই। যদি প্রথম দশটা লিংকে আমরা যা জানতে চাইছি তা না পাওয়া যায় তখন আমরা গুগলের দ্বিতীয় পেজে যাই। কিন্তু দ্বিতীয় পেজে যাওয়ার হার খুবই কম।
তাহলে গুগল কীভাবে এই র্যাংকিং করে? কে এক নম্বরে থাকে কেই বা দুই নম্বরে? এটা বেশ জটিল একটা বিষয়। সবাই একেবারে ঠিক করে বলতে পারবে না নির্দিষ্ট কোন কারনে গুগল র্যাংকিং করে। তবে একটা গাইড লাইন গুগল দিয়েছে।
এর প্রধান একটা ফ্যাক্টর হচ্ছে ভালো মানের ইউনিক আর্টিকেল। অর্থাৎ ইউজার যা জানতে চাইছে সেটা আমরা যদি আমাদের আর্টিকেলে ভালো ভাবে দিতে পারি তাহলে গুগল আমাদের ফার্স্ট পেজে র্যাংকিং দিবে। যদিও আরও অনেক ফ্যাক্টর আছে তবে ভালো মানের কন্টেন্ট বা আর্টিকেল সব চেয়ে বড় ফ্যাক্টর।
ইউজার ইন্টেন্ট কি
ভালো মানের আর্টিকেল কীভাবে লিখব? ভালো মানের আর্টিকেল লিখতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে ইউজার আসলে কি কি বিষয় জানতে চাইছে। যেমন- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আসলে ইউজার কি জানতে চান? তারা কি জানতে চায় কেন যুদ্ধ শুরু হলো? এই যুদ্ধে কে জিতবে? বা এই যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা কি? এমনও হতে পারে জানতে চাচ্ছে যে এই যুদ্ধের ফলে আমরা কি কি অসুবিধায় পড়বো। ইউজারের এই জানতে চাওয়া কে ব্লগিং এ ইউজার ইন্টেন্ট বলা হয়। আপনি যদি ইউজার ইন্টেন্ট ফুলফিল করে আর্টিকেল দেন তাহলে আপানার কন্টেন্ট র্যাংক করবেই! কীওয়ার্ড নিয়ে গবেষনাই যদি না করেন তাহলে কীভাবে বুঝবেন ইউজার কি চায়?
ডোমেইনের অথরিটি কি (Domain Authority বা DA)
এবার আসেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মোটামুটি অনেক ওয়েব সাইটই আগেই আর্টিকেল পাবলিশ করেছে। তাদের মধ্যে প্রথম আলো পত্রিকা আছে, উইকিপিডিয়া আছে। প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া কে সবাই বিশ্বাস করবে। কেননা তারা দীর্ঘদিন থেকে ভালো মানের আর্টিকেল পাবলিশ করেছে। তাদের আর্টিকেলে যে সব তথ্য দেয়া থাকে সে গুলো বিশ্বস্ত। গুগল বিভিন্ন সময় যাচাই করে দেখেছে তাদের তথ্য গুলো নির্ভুল।
এই যে তাদের প্রতি গুগলের নির্ভরতা এটাকে ডোমেইন অথরিটি বলে (Domain Authority বা DA)। যেহেতু তারা দীর্ঘ দিন থেকে নির্ভুল তথ্য দিয়ে এসেছে ফলে তাদের অথরিটি বেশী থাকবে। ডোমেইন অথরিটির মান ০-১০০ পর্যন্ত হয়।
সে ডোমেইনের অথরিটি যত বেশি সেই ডোমেইন কে গুগল তত বেশি ট্রাস্ট করে ফলে র্যাংকিং এ তত উপরে তাদের প্লেস থাকে। এক্ষেত্রে তাদের আর্টিকেল যদি একটু নিম্ন মানেরও হয় তবুও তারা ফার্স্ট পেজে র্যাংক করে।
কিওয়ার্ড সার্চ ভলিউম
কোন নির্দিষ্ট একটা কিওয়ার্ড মোট কতবার সার্চ করা হয়েছে সেটাই সার্চ ভলিউম।
কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি (Keyword Difficulty, KD)
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সবারই আগ্রহ এখন বেশি। সবাই যুদ্ধের অবস্থা নিয়ে জানতে চায়। তার মানে বেশি বেশি সার্চ করে অর্থাৎ সার্চ ভলিউম বেশি। যেহেতু সার্চ ভলিউম বেশি কাজেই সবাই চাইবে এই কিওয়ার্ডের উপর আর্টিকেল পাবলিশ করে ভিজিটর নিয়ে আসতে। কেননা ভিজিটর মানেই টাকা।
ধরুন এই কিওয়ার্ডে প্রথম আলো, উইকিপিডিয়া, ডেইলি স্টার এইসব ওয়েব সাইট আর্টিকেল পাবলিশ করেছে। স্বাভাবিক ভাবেই এরা র্যাংকিং এ উপরের দিকে থাকবে। কেননা তাদের ডোমেইন অথরিটি বেশি। এখন আপনি যদি এদের কে ডিঙ্গিয়ে উপরে যেতে চান তাহলে কি করবেন? তারা যেসব বিষয়ে এগিয়ে আছে আপনাকে সেসব বিষয়ের চেয়েও ভালো করতে হবে। সেটা করা কঠিন। ফলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আপনি চাইলেই আর্টিকেল লিখে র্যাংকিং এ আসতে পারবেন না। অর্থাৎ এই কিওয়ার্ডে র্যাংক করা কঠিন। এটাই কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি। যে কিওয়ার্ডে র্যাংক করা যত কঠিন তার ডিফিকাল্টি তত বেশি।
কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি ম্যানুয়ালি বের করা যায় আবার অনেক টুলস ও আছে যাদের হেল্প নিয়ে কিওয়ার্ড ডিফিকাল্ট পাওয়া যায়।
নিশ কি? (Niche)
ধরুন আপনি একটা ব্লগ সাইট করবেন যেখানে ল্যাপটপ নিয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল পাবলিশ করবেন। এই ল্যাপটপ বিষয়টিই হল আপনার নিশ। জনপ্রিয় কিছু নিশ হল-
১. জব বা চাকরি
২. পোষ প্রানি বা পেট
৩. ল্যাপটপ
৪. মোবাইলফোন
৫. টেকনোলজি
৬. অনলাইন ইনকাম
৭. হেলথ
৮. কার বা গাড়ি
ইত্যাদি
কন্টেন্ট গ্যাপ কি
ধরুন আপনি মোবাইল ফোন নিয়ে একটা আর্টিকেল বা কন্টেন্ট লিখবেন। আপনার কিওয়ার্ড “১৫০০০ টাকার মধ্যে সব চেয়ে ভালো মোবাইল ফোন”। এই কিওয়ার্ডটা খুবই জনপ্রিয়। কয়েকশ আর্টিকেল পাবেন এই কিওয়ার্ডের উপর। গুগলে প্রথম পেজে যারা র্যাংক করেছে আপনি সবার আর্টিকেল পড়বেন। পড়ে দেখবেন যে তারা কি কোন তথ্য মিস করেছে? ইউজার যা যা জানতে চেয়েছে তারা কি সব তথ্য দিয়েছে? এমন হতে পারে ইউজার ১৫০০০ টাকার মধ্যে ৫ জি মোবাইল ফোন আছে কি না সেটা খুজছে কিন্তু প্রথম পেজে যারা আছে তার এই তথ্যটি তাদের আর্টিকেলে দেয়নি।
এই যে আর্টিকেলে কোন একটা বা কয়েকটি তথ্য না থাকা এটাই হল কন্টেন্ট গ্যাপ। সবাই ক্যামেরা, ব্যাটারি, স্ক্রিন সাইজ এসব তথ্য দিয়েছে কিন্তু কেউই বলে নাই ৫ জি সুবিধা আছে কি নাই। আপনি এই গ্যাপ বের করলেন, আপনার আর্টিকেলে এই তথ্য যোগ করলেন। গুগল যখন আপনার আর্টিকেল দেখবে তখন এই নতুন তথ্যের জন্যই আপনি ফার্স্ট পেজে চলে আসবেন।
আসুন কিওয়ার্ড রিসার্চ শুরু করি
কিওয়ার্ড রিসার্চ শুরু করার আগে নিচের শব্দ গুলো বুঝতে পেরেছেন কি না আরেক বার দেখুন। না বুঝে থাকলে আবার পড়ুন, বুঝুন তারপর শুরু করুন-
১. SERP বা সার্প। আপনি যখন কোন কিছু খোজেন তখন গুগল রেজাল্ট গুলো তার যে পেজে দেখায় সেটাই SERP বা Search Engine Result Page.
২. ডোমেইন অথোরিটি বা DA
৩. সার্চ ভলিউম।
৪. সার্চ ইন্টেন্ট।
৫. র্যাংক। গুগলের সার্চ রেজাল্টের ১, ২, ৩ ইত্যাদি পজিশন।
৬. কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি বা KD
৭. লং টেইল কিওয়ার্ড।
কিওয়ার্ড আইডিয়া জেনারেট করা
কিওয়ার্ড আইডিয়া জেনারেট করার জন্য অনেক পেইড টুল আছে। আমরা যেহেতু বিগিনার লেভেলে আছি তাই আগেই পেইড টুলস এর দিকে যাব না। ফ্রিতেই অনেক কিওয়ার্ড আইডিয়া জেনারেট করা যায়।
ধরুন আমরা ব্লগিং নিশের কাজ করব। ব্লগিং বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়। ব্লগিং করতে গেলে আপনার প্রথমেই লাগবে ডোমেই এবং হোস্টিং অথবা আমরা হয়তো গুগলের ব্লগার দিয়েই শুরু করব।
তো একজন নতুন পাবলিক যে ব্লগিং এর কিছুই জানে না সে গুগলে গিয়ে কী সার্চ করবে? বেশির ভাগ সময়ে হয়তো এটা লিখবে-
‘কীভাবে ব্লগিং করতে হয়’
চলুন এটা লিখে গুগলে সার্চ করি।
আপনি যখনি সার্চ বক্সে ‘কিভাবে’ শব্দটি লিখবেন তখন গুগল আপনাকে অনেক গুলো সার্চ অপশন দেখাবে। যেমন- ‘কিভাবে লম্বা হওয়া যায়’

এর মানে হচ্ছে মানুষ এই কিওয়ার্ড দিয়ে এর আগে সার্চ করেছে। যেহেতু এটি সাজেশনের একেবারে প্রথম আছে এর মানে এটি দিয়ে বেশি সার্চ হচ্ছে। যত বেশি সার্চ তত কিওয়ার্ডের ডিফিকাল্টি বেশি।
এখন দেখুন শুধুমাত্র কিভাবে লিখেই আপনি অনেক গুলো কীওয়ার্ড আইডিয়া জেনারেট করে ফেললেন। এই কীওয়ার্ড দিয়ে আপনি আর্টিকেল লিখতে পারবেন। আমরা যেহেতু ব্লগিং নিয়ে আর্টিকেল লিখব সুতরাং কিভাবে এর পরে লিখব ব্লগিং। দেখুন গুগল অনেক গুলো সাজেশন দেখাবে। এই সাজেশন থেকে যেকোনো একটা কিওয়ার্ড নিয়ে নিন।

কিওয়ার্ড সিলেকশন
ধরুন আমরা ‘কিভাবে ব্লগিং শুরু করব’ এই কিওয়ার্ড নিলাম এখন গুগলে গিয়ে এই কিওয়ার্ড সার্চ করব। সার্চের রেজাল্টে প্রথম দশটি ওয়েব সাইটের প্রতিটিতে ঢুকবেন। তাদের আর্টিকেল গুলো পড়বেন। পড়ে যদি মনে হয়, তাদের চেয়ে আপনি আরও ভালো আরও তথ্য দিয়ে আর্টিকেল লিখতে পারবেন তাহলে এই কিওয়ার্ড নিয়ে নিন। আর্টিকেল লিখুন, পাবলিশ করুন।

কিছু দিনের মধ্যেই আপনার আর্টিকেল র্যাংকিং এ চলে আসবে।
আর্টকেল লেখার সময় কখনোই অন্যের লেখা হুবহু কপি করবেন না। যেমন কেউ যদি লেখে কলা খেলে বুদ্ধি বাড়ে আপনি লিখবেন কলা বুদ্ধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
উপসংহার
কীওয়ার্ড রিসার্চের অনেক পদ্ধতি আছে। আমি যেটা বললাম সেটা নতুনদের জন্য এবং বাংলা কিওয়ার্ডের জন্য ভালো কাজ করে। আস্তে আস্তে কিওয়ার্ড নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে আপনি নিজেই অনেক টেকনিক শিখে যাবেন।