নতুন যারা ওষুধ কোম্পানির কোয়ালিটি কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্টে জব করতে চায় তাদের ওষুধ কোম্পানির চাকরির প্রশ্ন নিয়ে কনফিউশন থাকে। ফার্মাসিউটিক্যালসের পরীক্ষায় মোটামুটি সহজ ধরনের প্রশ্নই করা হয়। যা প্রশ্ন হয় সবই এইচএসসি সিলেবাসের মধ্যেই আছে। যারা কলেজের কেমিস্ট্রির ছাত্র প্রাইভেট পড়িয়েছেন তাদের জন্য সহজ হবে। সব প্রশ্নই যে কমন পাবেন এমন না। যেগুলো পাবেন সেগুলো ভালো করে লিখে আসবেন।

ফ্রেশ ক্যান্ডিডেট যারা আছেন তারা চাপ নিবেন না। এমনও হতে পারে আপনার সাথেই কেউ কেউ পরীক্ষা দিচ্ছে যাদের কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা আছে। এর মানে এই না যে উনাকেই নেবে আর ফ্রেশ বলে আপনাকে নেবে না। ফার্মা সেকটরে ফ্রেশ ক্যান্ডিডেটদের ভ্যালু সব সময়ই আছে এবং থাকবে। কাজেই পরীক্ষার হলে গিয়ে একে ওকে জিজ্ঞেস করবেন না কার কত বছর এক্সপেরিয়েন্স বা কে কোথায় জব করছে। পরীক্ষা দিতে গিয়ে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
চলুন সম্ভাব্য প্রশ্ন ও তাদের উত্তর দেখে নেই। আমি যেভাবে লিখেছি সেভাবেই লিখতে হবে এমন কোন শর্ত নেই। আপনি নিজের মত করে লিখুন। কেমিস্ট্রির প্রশ্নের উত্তর লিখার সময় আজেবাজে কথা/অতিরিক্ত কোন কিছু লেখার দরকার নাই। টু দ্যা পয়েন্টে লিখবেন অর্থাৎ যতটা দরকার ততটাই লিখুন।
ওষুধ কোম্পানির চাকরির প্রশ্নঃ বিষয় রসায়ন
১. মোল বলতে কি বোঝায়?
মোলঃ কোন পদার্থের গ্রাম আনবিক ভর কে মোল বলা হয়।
যেমনঃ CO2 এর আনবিক ভর হচ্ছে ৪৪। ৪৪ গ্রাম CO2 কে ১ মোল CO2 বলে।
তাহলে ৪ গ্রাম CO2 মানে কত মোল CO2?
সাধারন ঐকিক নিয়মে,
৪৪ গ্রাম CO2 মানে ১ মোল
৪ গ্রাম মানে ৪/৪৪ = ০.০৯১ মোল CO2।
সূত্রটা হলঃ m/M
যেখানে m হল প্রদত্ত ভর আর M হল আনবিক ভর।
২. দ্রবনের মোলারিটি/মোলালিটি কি?
উত্তরঃ মোলারিটিঃ নির্দিষ্ট পরিমাণ পদার্থ যখন একক আয়তনের দ্রাবকে দ্রবীভূত থাকে তখন তাকে মোলার দ্রবন বলে। মোলার দ্রবনের ঘনমাত্রা কে মোলারিটি বলে।
গ্রাম আনবিক ভরের সমান পরিমাণে পদার্থ যখন ১০০০ মিলি বা ১ লিটার দ্রাবকে দ্রবীভূত থাকে তখন তাকে ১ মোলার দ্রবন বলে।
যেমনঃ ৪০ গ্রাম সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড কে ১০০০ মিলি পানিতে দ্রবীভূত করলে সেটা মোলার দ্রবন হবে। যার মোলারিটি হল ১ মোলার। মোলারিটিকে M দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আয়তন তাপমাত্রার সাথে সম্পর্ক যুক্ত অর্থাৎ তাপ বাড়ালে আয়তন বাড়ে কমালে আয়তন কমে। কাজেই দ্রবনের মোলারিটিও তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তিত হয়।)
মোলালিটিঃ নির্দিষ্ট পরিমাণ পদার্থ যখন একক ভরের দ্রাবকে দ্রবীভূত থাকে তখন তাকে মোলাল দ্রবন বলে। মোলাল দ্রবনের ঘনমাত্রা কে মোলালিটি বলে।
গ্রাম আনবিক ভরের সমান পরিমাণে পদার্থ যখন ১০০০ গ্রাম বা ১ কেজি দ্রাবকে দ্রবীভূত থাকে তখন তাকে ১ মোলাল দ্রবন বলে।
যেমনঃ ৪০ গ্রাম সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড কে ১০০০ গ্রাম পানিতে দ্রবীভূত করলে সেটা মোলাল দ্রবন হবে। যার মোলালিটি হল ১ মোলাল। মোলালিটিকে ও M দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
বস্তুর ভর তাপমাত্রার সাথে সম্পর্ক যুক্ত না অর্থাৎ তাপ বাড়ালে বা কমালে ভর বাড়ে বা কমে না কাজেই দ্রবনের মোলালিটি তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তিত হয় না।
৩. মোলার ও মোলাল দ্রবনের পার্থক্য কী?
উত্তরঃ মোলার দ্রবনের ক্ষেত্রে দ্রাবকের পরিমাণ হয় একক আয়তনের। অন্যদিকে মোলাল দ্রবনের ক্ষেত্রে দ্রাবকের পরিমাণ হয় একক ভরে।
মোলার দ্রবনের ঘনমাত্রা তাপমাত্রার সাথে পরিবর্তন হয় কিন্তু মোলাল দ্রবনের ঘনমাত্রার উপর তাপমাত্রার প্রভাব নেই।
৪. pH কি? রক্তের pH কত? বিশুদ্ধ পানির pH কত? চোখের পানির pH কত?
উত্তরঃ দ্রবনে হাইড্রোজেন আয়নের ঋণাত্মক ঘনমাত্রা কে pH বলে।
pH = -log[H+]
রক্তের pH 7.4।
বিশুদ্ধ পানির pH 7।
চোখের পানির pH 6.5-7.4
৫. সংকেত লিখুনঃ
পটাসিয়াম ডাইক্রোমেটঃ K2Cr2O7 পটাসিয়াম ক্রোমেট: K2CrO4
পটাসিয়াম পার ম্যাংগানেট: KMnO4
ম্যাগসিয়াম সালফেট: MgSO4
ফেরাস সালফেট: Fe2SO4
পটাসিয়াম ডাই হাইড্রোজেন সালফেট: KH2PO4
পটাশিয়াম ক্লোরাইড: KCl
জিংক ক্লোরাইড: ZnCl2
ক্যালসিয়াম কার্বোনেট: CaCO3
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড: NH4Cl
এসিটোনাইট্রাইল: CH3CN
n- হেক্সেন: CH3CH2CH2CH2CH2CH3
এসিটোন: CH3COCH3
আইপিএ: CH3CH(OH)CH3
পারক্লোরিক এসিডঃ HClO4
ইত্যাদি।
৬. বাফার দ্রবন কি?
উত্তরঃ যে সব দ্রবনে সামান্য পরিমাণে এসিড বা ক্ষার যোগ করলে দ্রবনের pH
এর কোন পরিবর্তন হয় না তাদের বাফার দ্রবন বলে।
সাধারণত দূর্বল এসিড ও তার লবণ ব্যবহার করে বাফার তৈরি করা হয়। যেমনঃ এসিটিক এসিড ও তার লবণ সোডিয়াম এসিটেট এর দ্রবন বাফার দ্রবন হিসেবে কাজ করে।
আমাদের রক্ত একটি বাফার দ্রবণ। আমরা এসিড বা ক্ষারীয় ধর্মের যে খাবারই খাই না কেন এর pH সব সময় 7.4 স্থির থাকে।

৭. ল্যাবরেটরিতে কি কি সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়।
উত্তরঃ
চোখের সুরক্ষার জন্য সেফটি গগলস।
হাতের সুরক্ষার জন্য ক্যামিকেল রেজিস্ট্যান্ট গ্লাভস।
ল্যাব কোট বা এপ্রোন, সেফটি সু/জুতা।
এসিড, ক্ষার বা অন্যান্য করোসিভ এবং ধোয়া বা শ্বাস তন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এমন পদার্থ ব্যবহার করতে ফিউম হুড এবং গ্যাস মাস্ক। নরমাল সার্জিক্যাল মাস্ক ল্যাবে ব্যবহার করা যাবে না।
গাঢ় এসিড গুলো পৃথক সেলফে রাখতে হবে।
ফ্লেমেবল কেমিকেল গুলো পৃথক সেলফে রাখতে হবে।
প্রতিটি কেমিকেলের বোতল/কন্টেইনারের সাথে লেবেল থাকতে হবে।
প্রতিটি কেমিকেলের এমএসডিএস (MSDS: Material Safety Data Sheet) থাকতে হবে।
৮. এসিডের দ্রবন কীভাবে বানানো হয়? কত ফোটায় এক মিলি হয়?
উত্তরঃ গাঢ় এসিড কে পানির সাথে মেশালে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়, এমনকি বিস্ফোরণও হতে পারে। এজন্য এসিডের দ্রবন প্রস্তুতির সময় প্রয়োজনীয় পরিমাণ এসিড ফোটায় ফোটায় বা অল্প পরিমাণে পানিতে যোগ করা হয়। এতে বেশি তাপ উৎপন্ন হয় না ফলে বিস্ফোরণের ঝুকি কমে যায়।
আমরা ল্যাবরেটরিতে যে ড্রপার ব্যবহার করি, সে ড্রপারের ২০ ফোটা প্রায় এক মিলিলিটার এর সমান হয়।
৯. সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের দ্রবন কোন ধরনের বোতলে সংরক্ষণ করা হয়? কেন করা হয়?
উত্তরঃ সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের দ্রবন বা যেকোন ধাতব হাইড্রোক্সাইডের দ্রবন প্লাস্টিকের বোতলে সংরক্ষণ করা হয়। কেননা, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড কাচের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সিলিকেট তৈরি করে। এর ফলে দ্রবনের ঘনমাত্রা পরিবর্তন হয়ে যায়।
১০. প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ কি? উদাহরণ দাও।
প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থঃ যে সব পদার্থের ঘনমাত্রা সময়ে সাথে পরিবর্তন হয় না তাদের প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ বলে। যেমনঃ পটাসিয়াম ডাইক্রোমেটঃ K2Cr2O7।
সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থঃ যে সব পদার্থের ঘনমাত্রা সময়ে সাথে পরিবর্তন হয় তাদের সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ বলে। যেমনঃ সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডঃ NaOH
১১. HPLC কি? কেন বলা হয়।
উত্তরঃ HPLC : High Performance Liquid Chromatography। এটি এক ধরনের সেপারেশন টেকনিক যার মাধ্যমে মিশ্রণ থেকে বিভিন্ন উপাদান কে নিখুতভাবে পৃথক করা যায়। আগে এটি High pressure liquid chromatography নামে পরিচিত ছিল। কেননা এই পদ্ধতিতে উচ্চ চাপ (৪০০ বার/ 6000 psi) ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে এই প্রযুক্তি নিখুঁত ভাবে কোন মিশ্রনে বিভিন্ন উপাদান কে শনাক্ত, পৃথককরণ এবং পরিমাণ নির্ণয় করার সক্ষমতা অর্জন করলে এর নাম high pressure এর পরিবর্তে high performance রাখা হয়।
১২. UV কি? বেয়ার-ল্যাম্বার্ট সূত্র।
UV: Ultraviolet এর সংক্ষিপ্ত রুপ। অতি বেগুনি রশ্মি ব্যবহার করে অজানা দ্রবনের ঘনমাত্রা বের করা যায়।
বেয়ার-ল্যাম্বার্ট সূত্রঃ অতিবেগুনী রশ্মি যখন কোন দ্রবনের মধ্যে যায় তখন এর একটা অংশ দ্রবন কর্তৃক শোষিত হয়। রশ্মির এই শোষিত হওয়ার হার দ্রবনের ঘনমাত্রার সমানুপাতিক। অর্থাৎ, দ্রবনের ঘনমাত্রা বাড়লে বেশি আলো শোষিত হয়।
১৩. হাইগ্রোস্কোপিক রিএজেন্ট কি?
উত্তরঃ যে রিএজেন্ট বা পদার্থ সহজে বাতাসের জলীয়বাষ্প শোষণ করে অর্থাৎ যে সব পদার্থের পানির প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকে তাদের হাইগ্রোস্কোপিক রিএজেন্ট বা পদার্থ বলে। যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড।
১৪. ডেসিকেটর কি? ডেসিকেটরের কাজ কি?
ডেসিকেটর একধনের ব্যবস্থা যাতে বাতাসের জলীয়বাষ্প শূন্যর কাছাকাছি করার ব্যবস্থা থাকে। ডেসিকেটরে হাইগ্রোস্কোপিক পদার্থ রাখা হয় যাতে বাতাসের জলীয়বাষ্প শোষণ না করতে পারে। অর্থাৎ ডেসিকেটরের কাজ হল জলীয়বাষ্প শূন্য করা যাতে ডেসিকেটরের মধ্যে রাখা পদার্থ/যন্ত্রপাতি জলীয়বাষ্প দ্বারা ক্ষতি না হয়।
১৫. সিলিকা জেল কি? কেন ব্যবহার করা হয়? সিলিকা জেলের কালার চেঞ্জ হলে কি হয়?
উত্তরঃ দানাদার সিলিকন ডাই অক্সাইড কে সিলিকা জেল বলা হয়। এটি ডেসিকেটরে ডেসিকেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিলিকা জেল জলীয়বাষ্প শোষণ করতে পারে। জলীয়বাষ্প শোষণ করলে এর রঙ হালকা গোলাপি রঙের হয়ে যায়। এ অবস্থায় সিলিকা জেল কে উত্তপ্ত করলে তা জলীয়বাষ্প ছেড়ে দিয়ে গাঢ় নীল বর্ণ ধারণ করে। সিলিকা জেলের রঙের তারতম্য দেখে ডেসিকেটরের জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিই বোঝা যায়। জলীয়বাষ্পর প্রতি সংবেদনশীল দ্রব্যেও জলীয়বাষ্প নিয়ন্ত্রণে সিলিকা জেলের প্যাকেট দেয়া হয়।
১৬. ফার্মাসিউটিক্যালসের নিজেস্ব শব্দের এলাবোরেশনঃ
বিষয় ভিত্তিক প্রশ্ন ছাড়াও আরও কিছু ওষুধ কোম্পানির চাকরির প্রশ্ন আছে যা একেবারেই ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত। এই বিষয় গুলো কোন বইয়ে পাবেন না।
GMP: Good Manufacturing Practice
cGMP: Concurrent Good Manufacturing Practice
GLP: Good Laboratory Practice
GDP: Good Documentation Practice
OOS: Out Of Specification
OOE: Out Of Expectation
OOT: Out Of Trend
TGA: Therapeutic Goods Agency (Australia)
MHRA: Medicines and Healthcare products Regulatory Agency (British)
FDA: Food and Drug Administration (USA)
DA: Drug Administration (Bangladesh)
CAPA: Corrective Action and Preventive Action
IPC: In Process Control
IPA: Iso Propyl Alcohol
SOP: Standard Operating Procedure
EOP: Equipment Operating Procedure
ECP: Equipment Calibration Procedure
BP: British Pharmacopoeia
USP: United State Pharmacopoeia
EP: European Pharmacopoeia
LOD: Loss On Drying/Limit Of Detection
LOQ: Limit Of Quantification
SOR: Specific Optical Rotation
SST: System Suitability
RSD: Relative Standard Deviation
RT: Retention Time
HPLC: High Performance/Pressure Liquid Chromatography
AAS: Atomic Absorption Spectrophotometer
IC: Ion Chromatography
GC: Gas chromatography
ICP-MS: Inductively Charged Coupled Mass Spectrophotometer
ICP-OES: Inductively Charged Coupled Optical Emission Spectrophotometer
IR: Infrared Spectroscopy
ATIR: Attenuated Total Reflectance Infrared Spectroscopy
ওষুধ কোম্পানির চাকরির প্রশ্ন এবং উত্তর নিয়ে টেনশন না করে উপরের প্রশ্ন গুলো মুখস্থ করে ফেলুন। যেকোন ফার্মার পরীক্ষায় অনেক এগিয়ে থাকবেন। রাসায়নিক গণনা চ্যাপ্টার থেকে অংক প্র্যাকটিস করবেন। পরীক্ষায় মোটামুটি ৫০% মার্ক পেলেই মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাক পাবে। মৌখিক পরীক্ষায় অনেক সময় লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপ্ত্র থেকেও প্রশ্ন করা হয়। কাজেই যতটা মনে থাকে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর গুলোও দেখে যাবার চেষ্টা করবেন।