কম বেশি সবার কাছেই ভাইভা একটা আতংকের বিষয়। ভাইভায় মূলত একজন প্রার্থীর মানসিক সক্ষমতা যাচাই করা হয়। প্রার্থীর আচরণ, ব্যবহার কেমন সেটাও বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। বিশেষ করে private job interview তে কি জিজ্ঞেস করা হবে সেটা কেউই বলতে পারে না। তবে বিষয় ভিত্তিক, জব রিলেটেড প্রশ্ন অবশ্যই করা হয়। প্রশ্ন এবং তার উত্তর থেকেই পরের প্রশ্ন হয়।

ভাইভার জন্য ফরমাল ড্রেস
ভাইভার জন্য ড্রেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক সেট ফরমাল ড্রেস শুধুমাত্র ভাইভার জন্য বানানো উচিৎ। গাঢ় কালারের প্যান্ট (কালো, নেভি ব্লু, চকলেট কালার হলে ভালো), হালকা কালারের শার্ট (লাইট ব্লু, শাদা অগ্রাধিকার)। কালো শু হলে ভালো। অন্য কালারও চলে। খেয়াল রাখবেন শু যে কালারের হবে আপনার বেল্টও সে কালারের হতে হবে। বেল্টের বকলেস যেন মার্জিত হয়। ভাইভার ড্রেসটা শুধুমাত্র ভাইভার জন্যই রাখবেন। ঢাকার নিউমার্কেট/সাইন্সল্যাবের ওখানে গেলে ১০০০-১২০০/- মধ্যের শার্ট ও প্যান্ট হয়ে যাবে। শু ছাড় আছে এমন ব্র্যান্ড থেকে নিন। বেল্ট ব্র্যান্ডের নেয়ার দরকার নাই, শুধু শুধু টাকার অপচয়।

যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে স্যুট বানাতে পারেন। প্রতিটি প্রাইভেট সেক্টরে স্যুটের আলাদা গুরুত্ব আছে। গরম বা শীত যাই হোক না কেন স্যুট আর টাই সব সময় তারা আশা করে। এমনকি একবার বিসিএস ভাইভাতে স্যুট কেন পড়িনি এটা ধরেছিল। কাজেই সামর্থ্য থাকলে বানাবেন নয়তো ধার করবেন।
যদি আপনার বাসস্থান থেকে ভাইভার অফিস দূরে হয়, আপনার যদি একাধিক যানবাহন পরিবর্তন করতে হয় তাহলে আপনার ড্রেস একটা ব্যাগে নিন। অফিসে গিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিন। আমি এটা সবসময় করেছি। পপুলার ফার্মার ভাইভা দিতে গিয়ে দেখি আমার শার্টের হাতায় বাসের সিটের জং লেগে গেছে। ভাগ্যিস স্যুট ছিল।
মোট কথা ভাইভা রুমে ঢুকার সময় যেন আপনার একটা পরিপাটি লুক থাকে। আপনাকে দেখে যারা ভাইভা নেবেন তাদের মধ্যে একটা পজিটিভ ইম্প্রেশন হলে ভাইভাতে বেশ ভালো সাপোর্ট পাবেন।
কথায় আঞ্চলিকতা এড়িয়ে চলবেন। আমার জামালপুর বাড়ি, কথা বলতে গেলে টান চলে আসে কিন্তু ভাইভা বা গুরুত্বপূর্ণ কারো সাথে কথা বলতে গেলে আঞ্চলিকতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। এতে তারা মনে করেন আমি তাদের গুরুত্ব দিচ্ছি। বেশ ভালো কাজ করে।
পারফিউম ব্যবহার করতে পারেন। তবে কড়া গন্ধের পারফিউম ব্যবহার করা যাবে না। আপনি নিশ্চয়ই চাননা আপনার পারফিউমের গন্ধে অন্যের মাথা ধরে যাক।
এবার দেখা যাক কি কি প্রশ্ন ভাইভায় সাধারণত করা হয়ঃ
Please Introduce yourself or Tell us something about yourself
অবশ্যই ইংরেজিতে। আপনি যদি ইংরেজিতে কথা বলতে নাও পারেন (৯৫% স্টুডেন্ট ইংরেজিতে কথা বলতে পারে না) তারপরেও কিন্তু নিজের সম্পর্কে যতটুকু বলবেন সেটুকু ইংরেজিতে বলবেন। মুখস্থ করে বারবার প্র্যাকটিস করবেন। যেন বলার সময় না মনে হয় যে মুখস্থ বলছেন।
এভাবে বলতে পারেন-
Thank you sir for letting me introduce myself. I am arfan. I am from Rangpur. I have completed my B Sc in Chemistry with honors from National University. I also completed M. Sc. in Chemistry from the same university. My affiliated college was Dhaka College.
My father is a businessman and my mother is a homemaker. I have two brothers.
In my free time I like to travel/read books/listen to music/watch movies. That’s all about me.
যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করবেন সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলতে বলা হয়। কেন সেই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে চান?
আগে থেকে খোজ খবর নিয়ে যাবেন। পজিটিভ দিক গুলো বলবেন। অতিরিক্ত তেল মারা যাবে না।
কেন এই চাকরি করতে চান?
চাকরিটি যদি আপনার সাব্জেক্ট রিলেটেড হয় তাহলে বলুন- যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন সে বিষয়েই চাকরি করতে চান। এতে আপনার অর্জিত জ্ঞান সরাসরি কাজে লাগার সুযোগ আছে। যদি সাবজেক্ট রিলেটেড না হয় তাহলে জবের ভবিষ্যৎ ভালো, উন্নতি করার সুযোগ আছে এটা বলুন। চাকরি দরকার তাই করতে চান এটা কখনোই বলবেন না।
সরকারি চাকরি করবেন কি না?
যদি সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে বলবেন যে, বিসিএস দিতে চান। কিন্তু বর্তমান চাকরির ক্ষতি করে নয়। সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা না থাকলে না বলে দিন।
অন্য কোম্পানি বেশি স্যালারি দিলে চলে যাবেন কি না?
নিজেকে ভবিষ্যতে কোথায় দেখতে চান?
যেহেতু আপনি ফ্রেশ হিসেবে ভাইভা দিচ্ছেন কাজেই একটু ঘুরিয়ে উত্তর দিন। বলুন যে, যেহেতু আপনি ফ্রেশ, কাজ শিখতে চান। কমপক্ষে তিন বছর বর্তমান প্রতিষ্ঠানে থাকবেন। আপনার কাজ ভালো হলে প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই তার মূল্যায়ন করবে। সুতরাং জব চেঞ্জ করার প্রয়োজন হবে না।
যে ধরনের জবে ভাইভা দিতে যাবেন বলবেন ঐ জব সেক্টরে আপনি নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
ঘুম থেকে উঠে এখনে আসা পর্যন্ত কি কি করেছেন বা কীভাবে এসেছেন ইংরেজিতে বলুন।
এটা লিখে প্র্যাকটিস করবেন।
কোম্পানি সম্পর্কে কিছু জানতে চান কি না? কত স্যালারি চান?
কর্মীদের কী ধরনের সুবিধা দেয়া হয় জিজ্ঞেস করুন। বোনাস কয়টি, অর্জিত ছুটি দেয়া হয় কি না, প্রমোশনের স্কোপ কেমন, ট্রান্সপোর্ট সুবিধা আছে কি না, খাবার দেয়া হয় কি না।
স্যালারির বিষয়টি আগে থেকে জেনে যাবেন। তার আশেপাশে স্যালারি চাইবেন। যদি না জানতে পারেন তাহলে জিজ্ঞেস করে নিন। ফ্রেশ হিসেবে ১৫ হাজারের নিচে কোন জব না করাই ভালো বলে মনে করি।
নামাজ/প্রার্থনা করেন কি না?
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ধার্মিক প্রার্থীকে ভালো চোখে দেখে।
সাম্প্রতিক খুব আলোচিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
কম্পিউটার চালাতে পারেন কি না?
শখ কি?
কাজের চাপ নিতে পারবেন কি না? গ্রুপে কাজ করতে সমস্যা আছে কি না? ওভারটাইম করতে সমস্যা আছে কি ?
এই প্রশ্ন গুলোর নেগেটিভ উত্তর দিলে আপনি চাকরি পাবেন না। যদি আপনার গ্রুপে কাজ করতে সমস্যা হয় তাহলে নিজেকে বদলাতে হবে।
আপনার চেয়ে বয়সে ছোট কেউ বা আপনার বন্ধু যদি আপনার বস হয় তাতে কোন সমস্যা আছে কি না?
যদি সত্যিই সমস্যা থাকে তাহলে চাকরি করা আপনার জন্য কঠিন হবে।
ভাইভা দিতে গিয়ে নিজেকে জাহির করবেন না। যদি এমন হয় যে প্রশ্নকর্তা ভুল বলছেন তারপরও তার ভুল ধরিয়ে দিতে যাবেন না। বিনীতভাবে বলুন যে আপনি জানতেন উত্তর এটা। সম্ভবত আমারই ভুল হচ্ছে। উত্তরটি আপনি পূণরায় দেখবেন।
ইনসাল্টিং টাইপের কথা বললেও রাগা যাবে না। হতে পারে আপনার টেম্পারমেন্ট দেখার জন্যই আপনাকে রাগাতে চেয়েছে।
সর্বপরি, সব প্রশ্নের উত্তর সঠিক দেয়া মানেই ভালো ভাইভা না। ভুল উত্তর দিয়েও আপনি ভাইভায় উতরে যেতে পারেন। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন। চাকরি আপনার হবেই।